নির্বাচিত হলে মাদক ও কিশোরগ্যাং মুক্ত উপজেলা করবেন সোহেল

স্টাফ রিপোর্টার: কিছুদিন আগেই উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উৎসবের আমেজ শেষ হতে না হতেই এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে এই নির্বাচনের ১ম, ২য় ও ৩য় ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন।
এদিকে সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী দেবে না বিএনপি এমনটাই বলেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না পণ করেছেন তারা। যারা প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এখন পর্যন্ত তাদের শরীক দলেও একই অবস্থান আছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে এবারে দলীয় প্রতিক (নৌকা) না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ব্যাপক তোড়জোর লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজশাহীতে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপেই রয়েছে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা। এবারে দলীয় প্রতিক না থাকায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলায়।
সারা দেশের ন্যায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইতোমধ্যে প্রার্থীদের দৌড়ঝাড় শুরু হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। আগামী ৮ মে গোদাগাড়ী উপাজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এই উপজেলায় দিনরাত জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সকাল থেকে রাত উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, দুইটি পৌরসভাসহ বিভিন্ন প্রান্তরে আপামর জনসাধারণের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময়, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুধিজনদের সাথে মতবিনিময় ও ইফতারে যোগদান করছেন তিনি।
এর আগে গত ২ মার্চ পুরো উপজেলা জুড়ে বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। জনসংযোগ কালে বেলাল উদ্দীন সোহেল ভোটারদের নিকট গিয়ে সকল লোভ ও ক্ষমতার অর্থবৃত্তায়নের দুরে থেকে একান্ত দেশ, মাটি ও মানুষের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলাকে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে স্মার্ট উপজেলা পরিষদ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে গোদাগাড়ী উপজেলায় মাদক ও কিশোর গ্যাং প্রতিহত করা হবে।
বেলাল উদ্দীন সোহেল বলেন, আমি দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাত্র আড়াই বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি স্বচ্ছতার সাথে। ভালো কাজের স্বৃকীতি স্বরুপ জেলার শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌছে দিতে চাই। আমি ইউপি চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ বলতে পারবে না তিল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কাজ করেছি বা অনিয়ম করেছি। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কোন ধরনের কাজে অগ্রাধিকার দিতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গ্রাম পর্যায়ে সকল সেবা পৌছে দিতে চাই। ছোট খাটো রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, পানির সংকট সমস্যার সমাধান, বিভিন্ন গ্রামে টিউবওয়েল ও সাবমারসিবল পাম্পসহ প্রতিটি গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌছে দিতে চাই।
তিনি বলেন, দেওপাড়া ইউনিয়নের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে, চৈত্যন্যপুর কমিউনিটি ক্লিনিক এর ভবন নির্মাণ, কানাইডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় এর বাথরুম নির্মাণ, রাজাবাড়ী হাট দূর্গা মন্দিরর বাথরুম নির্মাণ, জরুরী অবস্থায় ঈশ্বররীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ নির্মাণ, নবায় বটতলা মিশনের রাস্তা এইচবিবি করণ, গোলায় পুকুরের পাশে রাস্তার ধারে প্রোটেকশন নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও যুব সমাজকে বাঁচাতে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। আপনারা দেখেছেন, এই উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব ছিলো না কিন্ত দুর্বল জনপ্রতিনিধির জন্যই গত ৫ বছরের মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার তৈরী হয়ে এদের দৌরাত্মে জনগণ অতিষ্ঠ হয়েছে। এখন গোদাগাড়ী সদরে বাস থেকে নামলেই পকেট থেকে বা জোর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। আমার ইউনিয়নে (দেওপাড়া) এসবের নজির নেই। এছাড়াও উপজেলার সম্মানিত মানুষদের নানান রকম হেয় প্রতিপন্ন করে থাকে। আমি নির্বাচিত হলে এসব অপকর্মের মূল উৎপাটন করে সুন্দর উপজেলা সাজাতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমি সরকারের বরাদ্দের ১০০ ভাগ সুষ্ঠ বন্টন করে জনগণের কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটাতে চাই। নিজের পকেটে ভরে একটি টাকাও নিয়ে যেতে চাই না এবং জনসেবার নামে ব্যবসা করতে চাই না। আমি এমন কাজ করতে চাই যেখানে কোন অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। আমি কথায় নয় জনগনের সেবাই বিশ্বাসী।
জানা গেছে, বেলাল উদ্দীন সোহেল- বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারি সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাজার হাজার জনগণের মাঝে চাল, ডাল তেল, সাবান, হ্যন্ডস্যানিটাইজেশন, ওষুধসহ সামগ্রী দরিদ্র জনগণের মাঝে বিতরণ করেছেন। প্রতিটি ঈদ ও পূজোর সময় অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে শাড়ী, কাপড়, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন পোশাক উপহার, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দিরে ব্যাক্তিগত নগদ অর্থ প্রদান, প্রত্যান্ত অঞ্চলে পানি সংকট দূরিকরণে পানির পাম্পসহ বিভিন্ন অনুদান প্রদার করে আসছেন। দেওপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা ও বিভিন্ন গরিব ও অসহায় মানুষের চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি প্রথমবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র আড়াই বছর। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এই এলাকায় জনসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গত বছর জেলার ৭২টি ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। এছাড়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে জেলায় টানা ছয় বছর ধরে সর্বোচ্চ আয়কর দেওয়ার সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেওপাড়া ইউনিয়ন শাখার ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে থেকে দায়িত্বের সাথে কমিটি গঠন করেন। ২০১৪ সাল থেকে অদ্যবধি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার অর্থবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর ভোট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ছিলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম এবং আলহাজ অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস এর সাথে থেকে ওয়ার্ড কমিটি গঠন তাদের তদারকি, ভোট কেন্দ্র কমিটি গঠন, দেখভাল করাসহ সকল খরচ করি, দীর্ঘদিন থেকে দেওপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের সুসংগঠিত করে রেখেছি।
বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে আর্থিক সহায়তা করে আসছেন। তিনি যথাযথ মর্যদায় ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ৭ই মার্চ, ১৭ই মার্চ, ২৬শে মার্চ, ১৫ই আগষ্ট, ৩ রা নভেম্বর, ১৪ই ডিসেম্বর, ১৬ই ডিসেম্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও ব্যস্তবায়ন করে চলেছেন।
এদিকে বুধবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নির্ধারিত দিনে চেয়ারম্যান, মহিলা ও মহিলা ভাইস-এই তিনটি পদে ১১ প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করেন রাজশাহী সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটানিং অফিসার শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক।
চেয়ারম্যান পদে ৫ জন বৈধ প্রার্থী হলেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতন, উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগকৃত দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল ও জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী। বাদ পড়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ড. আব্দুর রহমান মুহসেনী।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার বৈধ প্রার্থী হলেন- গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম সরকার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল ও আদিবাসী নেতা হুরের মুর্মু।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ বৈধ প্রার্থী হলেন- উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খাতুন মিলি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি কৃষ্ণা দেবী।
গোদাগাড়ী উপজেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। পরদিন প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হবে। প্রথম ধাপের দেড়শ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ | সময়: ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর