বিনোদপুর রণক্ষেত্র, অগ্নিসংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাসভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় কয়েকটি মোটর সাইকেল ও দোকানসহ ক্যাম্পাসে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে।
স্থানীয়দের হামলা ও পুলিশের গুলিতে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। এসময় আহত শিক্ষার্থীদের বিশ^বিদ্যালয়ের বাসে ভরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। এদিকে এই ঘটনার জেরে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন আগামী রবি ও সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী রেললাইন অবলোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমীনের সঙ্গে বাস ভাড়া নিয়ে বচসা হয়। এতে বাকবিতণ্ডায় স্থানীয় এক দোকানদার জড়িয়ে পড়েন। এসময় সেখানে ওই বিভাগের ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গোলাম কিবরিয়ারসহ ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে আশপাশের হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এর পরে দফায় দফায় সেখানে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে স্থানীয়রা আগুন জ¦ালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত সাড়ে ৮টার দিকে দমকল বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি উপস্থিত হয়। এদিকে রাবি মেডিকেল সেন্টারের সামনে উপস্থিত উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এসময় তিনি আগামী রবি ও সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেন।
এদিকে রাত ১০টার দিকে বিনোদপুর এলাকায় ক্যাম্পাসের বাহিরের মেসগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয়রা। এই খবরে ক্যাম্পাসের ভেতরের শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেটের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান এবং কয়েকটি দোকানে অগ্নি সংযোগ করে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ফের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের রাবার বুলেট ও গুলির ছররা এবং স্থানীয়দের হামলায় আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়।
রামেক হাসপাতাল ও বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গুরুতর আহত অবস্থায় অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী ও ১ জন স্থানীয়কে ভর্তি করা হয়। এছাড়া দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টাতেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসেনি। রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়রা হামলারত অবস্থায় পুলিশ গুলি চালায়। একদিকে স্থানীয়দের এলোপাথারি ইট নিক্ষেপ ও অন্যদিকে পুলিশের গুলিতে তাদের অবস্থা বেগতিক হয়। তারা জানায়, স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালায়। কয়েকটি মেসেও হামলা করা হয়।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত সাড়ে ১১টায় বিনোদপুর গেট এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও ৭ প্লাটুন বিজিবি অবস্থান নেয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চারুকলা এলাকায় রাজশাহীর প্রধান রেললাইনটি অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।


প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ