গোমস্তাপুর কৃষি বিভাগের নতুন ফসল রঙিন ফুলকপি

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি ঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করে সফলতা পেয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ভালো ফলনের পাশাপাশি ফুলকপির ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। সাদা ফুলকপির চাইতে রঙিন ফুলকপি চাষবাদে কম সময় লাগে বলে কৃষকরা এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছে। রঙিন ফুলকপি আর সাদা ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য শুধু বীজে। যুগ যুগ ধরে বাজারে প্রচলিত সাদা ফুলকপির পাশাপাশি নতুনমাত্রা যোগ করেছে রঙিন ফুলকপি।

 

 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু হয়েছে। তবে গোমস্তাপুরে এবারই প্রথম চাষ হয়েছে রঙিন ফুলকপির। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগীতায় পরীক্ষামূলকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ইউনিয়নের জাহিদনগর গ্রামে প্রথমবার এ রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। চারা রোপণের পর থেকে আড়াই মাসের (৭৫ দিনের) মধ্যে জমি থেকে ফসল তোলা যাচ্ছে। এই ফুলকপি চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক সাধারণ মানুষ। তাদের কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। এই রঙিন ফুলকপি চীন এবং ইউরোপে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

 

গোমস্তাপুর ইউনিয়নের জাহিদনগর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি প্রথম কৃষক এই উপজেলায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। শুরুর প্রথম দিকে আমি এ রঙিন ফুলকপি চাষ করে বেশ চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু এর ফলন দেখে আমি খুব আশাবাদী যে, এ রঙিন ফুলকপি থেকে বেশ মুনাফা অর্জন করতে পারব।

 

 

একই গ্রামের আরেক কৃষক সুমন আলী বলেন, এ রঙিন ফুলকপির চাষপদ্ধতি সম্পর্কে ফিরোজের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করে আমিও আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপির চাষে আরও মনোনিবেশ করব। এছাড়া উপজেলার গোমস্তাপুর বাজার পাড়ার ইব্রাহিম আলীও এ রঙিন ফুলকপির চাষাবাদ করেছেন।

চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে মোট ২ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন ‘এ’ উপাদান থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, গোমস্তাপুরে এবার প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এটি একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল। চাষ পদ্ধতির অন্যান্য সব প্রক্রিয়া একই রকম। বর্তমানে বাজারমূল্য সাদা ফুলকপির তুলনায় রঙিন ফুলকপির ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। রঙিন ফুলকপি চাষে রোগবালাই কম হয়। জৈব উপায়ে এই ফুলকপিতে আসা পোকামাকড় দমন করা যায়। চাষিকে বাড়তি কোনও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। প্রথম দিকে এ রঙিন ফুলকপি চাষে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। পরে কৃষক ফিরোজ আলী আগ্রহ দেখালে তাকে কৃষি অফিস থেকে ফুলকপির চারা, জৈব সার, কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় সার সহ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।

 

এটি স্থানীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষে কতটা উপযোগী বা কেমন ফলন হয় আমরা দেখতে চেয়েছি। আমরা সফল হয়েছি‌ বলে জানান। তিনি আরো জানান, অস্ট্রেলিয়া ও চীনসহ অন্যান্য দেশে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। তার মতে, সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হয়।

 

 

এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা জানান, প্রথমবার এ উপজেলায় রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ফসল। আশা করি আগামীতে এ রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষক লাভবান হবে এবং ভালো মুনাফা অর্জন করবে। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৫২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine