মাত্র ১২ ঘণ্টার একটানা বৃষ্টিতে রাজশাহীর সড়কে চলছে নৌকা

স্টাফ রিপোর্টার :
মাত্র ১২ ঘণ্টার একটানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজশাহী শহর। এলাকায় ঘরে ঘরে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। কয়েকটি এলাকার বাসাবাড়ি ও অফিস দপ্তর নিমজ্জিত হয়েছে কোমর পানির নিচে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কগুলো তলিয়ে গেছে হাঁটু-কোমর পানিতে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত গোরহাঙ্গা রেলগেট, সাহেব বাজার, আদালত চত্বর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক ও লক্ষীপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার জানান, একটানা বৃষ্টিতে রাজশাহী মহানগরীর ৮০ ভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে নগরীর জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে তার আশঙ্কা। তিনি আরও জানান, নগরী থেকে পানি নিষ্কাশনের যেসব ড্রেন আছে সেগুলো দিয়ে পানি নামতে পারছে না। ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে ড্রেনগুলির নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে আছে। সংকট সমাধানের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন জরুরি টিম নামিয়েছে নগরীতে। তারা ড্রেনগুলোর বন্ধ হয়ে থাকা জায়গাগুলো পরিষ্কার করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার রাত থেকেই কোমর পানিতে ডুবেছে গোরহাঙ্গা রেলগেট চত্বর। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টাতেও রেলগেট চত্বরটি ডুবে ছিল কোমর পানিতে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার সামনের সড়কের। হেতেমেখাঁ মোড় থেকে লক্ষীপুর মোড় ও বিলসিমলা মোড় পর্যন্ত সড়ক দুটিতে কোমর পানি ছিল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ভবনের সামনের চত্বরটি কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের প্রবেশ মুখেও পানি উঠেছে। ফলে এই পথে রোগী নিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে ঢুকতে পারেনি।

 

টানা ভারিবর্ষণে শিরোইল কলোনি, ছোট ও বড় বনগ্রাম, শালবাগান, চকপাড়া, মেহেরচণ্ডী, মাস্টারপাড়া, হাজরাপুকুর, ভদ্রা রেলগেট, বালিয়াপুকুর, উপশহর, বাগানপাড়া, চণ্ডীপুর, হড়গ্রাম, রায়পাড়া, বুলনপুর, আমবাগান, তেরখাদাসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এদিকে কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, একটানা ভারিবর্ষণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরীর মানুষ। বাইরে থেকে কাজের সন্ধানে আসা লোকজনও কাজ ছাড়াই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সড়কগুলোতেও যানবাহনের সংখ্যা কম ছিল। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো ছেড়ে গেলেও যাত্রীসংখ্যা বেশ কম ছিল। রাজশাহী থেকে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে।

মাত্র ১২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরী তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুর্ভোগ কবলিত মানুষ। নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম বলেন, নগরীর বড় বড় পুকুরগুলো সব ভরাট করে আবাসন তৈরি হয়েছে। ফলে পানি ধারণক্ষমতা কমেছে। এতে বৃষ্টির পানি আটকে গিয়ে নগরীতে জলাবদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়িতে।নগরীর শিরোইল কলোনির বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। তো এর ফলাফল কি দাঁড়াল। এভাবে গোটা নগরী ডুবে গেল কেন?

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম জলাবদ্ধ পরিস্থিতির জন্য ডেভেলপারসহ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাসা বাড়ি নির্মাণকেই দায়ী করেছেন। তিনি আরও বলেন, নগরীতে ২৭৭ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। আরও ১৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণাধীন রয়েছে। একটি ড্রেন দিয়ে পদ্মায় ও আরেকটি দিয়ে বারনই নদীতে নগরীর পানি নিষ্কাশন হয়। এসব ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলায় নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়েছে। নগরীর পানি নিষ্কাশনে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টি আরও একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩ | সময়: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর