রাজশাহী ও পাবনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৪ ডিগ্রি : অতি তীব্র দাবদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অতি তীব্র এই তাপপ্রবাহে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর চলতি মৌসুমে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, ২০০৫ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই চলতি মৌসুমে গত ১৭ এপ্রিল (বুধবার) থেকে রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা বা বা তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে তীব্র দাবদাহে মানুষসহ প্রাণিকূলে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে।
টানা এই তাপপ্রবাহে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিরূপ প্রকৃতির কাছে থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন। এপ্রিল জুড়েই স্মরণকালের তপ্ত মৌসুম পার করছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। মৃদু থেকে মাঝারি; মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে খরাপ্রবণ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে। সর্বশেষ গত তিনদিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পেরিয়েছে।
তীব্র রোদ ও তাপপ্রবাহের কারণে বেশ কয়েকদিন থেকেই দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষকে ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকে আবার চোখেমুখে ঠান্ডা পানি দিতে দেখা যায়। তবে রিকশা চালকদের তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই রিকশা চালাতে দেখা গেছে। এছাড়া তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া অন্য পেশার মানুষেরাও।
ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রায় মাসজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। শুক্রবার ঈশ্বরদীতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমের চলমান পক্ষকালের অধিক সময় তীব্র তাপদাহ বিরাজ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ফলে কার্যত ঈশ্বরদীর জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
প্রকৃতিতে বৈরী আবহাওয়া দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ায় ক্ষেত-খামার নিয়ে চরম চিন্তিত কৃষকরা। তারা জানান, মাঠে তেল ও ডাল বীজে বিপর্যয় হতে পারে। বিশেষ করে পাট, তিল ও বাদামের ফলন হুমকির মুখে।
চৈত্রের কাঠফাটা রোদের পর বৈশাখের মধ্যবর্তীতেও তাপমাত্রা না কমায় কাবু হয়ে যাচ্ছে বয়স্করা। প্রায় মাসব্যাপী তীব্র তাপদাহ চলছে প্রকৃতিতে। এ দিকে মাসজুড়ে ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহ। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে ঘন ঘন লোডশেডিং। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। ঝরে যাচ্ছে মৌসুমি ফল, বিশেষ করে আম, লিচু ও বাদাম।
প্রতিদিনই সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত একই মাত্রায় থাকছে তাপদাহ। সূর্য একটু উপরে উঠতেই মনে হয় যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে না গ্রামের মানুষ। তাই দুপুর গড়াতেই পথ-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এদিকে তীব্র তাপদাহের কারণে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। গাড়ীর চাকা ও মানুষের পায়ের জুতা-স্যান্ডেল আটকে যাচ্ছে সেই গলিত পিচে।
এ দিকে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর সারি। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।
তীব্র রোদ ও গুমোট আবহাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। অনেকে সামান্য স্বস্তির জন্য ছুটে চলছেন গাছের ছায়াতলে। তীব্র রোদ ও গরমে স্বস্তি পেতে অনেকেই ছুটছেন আখের রস, তরমুজ, লেবুর শরবত, ঠান্ডা মাঠা, শসা ও ডাবের পানির দিকে। কনফেকশনারি থেকে শুরু করে বিপণী বিতানগুলোতে আইসক্রিম ও কোমল পানীয় বেচা-বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।
তাপদাহের কারণে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন থেকে হিট অ্যালার্ট এবং তাপদাহ থেকে রক্ষায় করণীয় বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ফলে ঘরের মধ্যেও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা অতি তীব্র তাপপ্রভাব। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরো কয়েকদিন থাকতে পারে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪ | সময়: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ