নিয়ামতপুরে ১২৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রস্তুত, উদ্বোধন আজ

মোঃ তোফঅজ্জল হোসেন: ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের ভাষার মাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মাস। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মত ২১ ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারীভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী ও বেসরকারীভাবে বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে। কিন্তু অবাস্তব হলেও এটাই সত্য রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ৭২ বছর পেরিয়ে গেলেও এই উপজেলায় সরকারীভাবে কোন শহীদ মিনার নেই।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপির হাত দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে ২০১৯ সালে তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি উপজেলার সর্ব বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ামতপুর সরকারী কলেজেও কোন শহীদ মিনার নেই।
অবশেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপির উদ্যোগে উপজেলা ১২৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। রাত পোহালেই উদ্বোধন। ২০ ফেব্রুয়ারী নিয়ামতপুর সরকারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২৮টি শহীদ মিনার উদ্বোধন করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। কিন্তু উপজেলার ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টিতে শহীদ মিনার রয়েছে, বাঁকীগুলোতে নেই, উপজেলার ৩৬টি মাদ্রাসার একটিতেও কোন শহীদ মিনার নাই। উপজেলার ৮টি কলেজের মধ্যে শুধুমাত্র বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রী কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকী ৭টি কলেজে কোন শহীদ মিনার নাই। ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। অথচ ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০০ সাল থেকে পৃথিবীর সব দেশে এ দিবসটি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করছে। ঠিক তখন উপজেলা প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত নিয়ামতপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যা বর্তমানে সরকারী কলেজে রূপান্তরিত। কলেজে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়নরত। কর্তৃপক্ষ দাবী করে সর্ব বৃহৎ কলেজ, অথচ কোন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় নাই। নিয়ামতপুর সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ হোসেন মন্ডল বলেন, আমাদের নিজস্ব অর্থে শহীদ মিনার নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। কলেজ যেহেতু সরকারের এখন সরকারকেই উদ্যোগ নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। আমি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি যে, কলেজে অবিলম্বে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।
চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ক্লাস রুমের সংকট দূর হয়েছে। সরকারীভাবে বিল্ডিং পেয়েছি। নওগাঁ জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকৌশলী কয়েকবার মাপযোগ করেছিল। বাউন্ডারী ওয়াল ও শহীদ মিনার নির্মান করার জন্য। যদি সরকারীভাবে উদ্যোগ না নিতো তাহলে আমরাই শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ নিতাম। তিনি আরো বলেন, সরকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর সংস্কার ও ভবন নির্মানের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে অথচ যারা আমাদের মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মান করার জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ করা হয় না। এমনটি নির্দেশনাও প্রদান করা হয় না। সরকারের উচিৎ বিদ্যালয় বা কলেজ ভবন নির্মান ব্যয় নির্ধারণ করার সময় একটি শহীদ মিনার এর অর্থ যুক্ত করা।
উপজেলায় সরকারীভাবে কোন শহীদ মিনার নাই। নিয়ামতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মিত তাদের শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। নিয়ামতপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজেও কোন শহীদ মিনার নাই।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর