কুমিল্লার জ্যাকস-মঈনের তাণ্ডবে ঘরের মাঠে ধরাশায়ী চট্টগ্রাম

স্পোর্টস ডেস্ক: ২০২২ সালে উইল জ্যাকসকে বিপিএলে পরিচয় করিয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নিজের প্রথম বিপিএলে আসরের সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ইংলিশ এই ক্রিকেটার। একবছর পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সিতে খেলতে এসে নিজের তৃতীয় ম্যাচে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। তার দারুণ ইনিংসে কুমিল্লা যৌথভাবে বিপিএলের সর্বোচ্চ ২৩৯ রান করে। কঠিন এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে খেই হারায় চট্টগ্রাম। মঈন আলী ও রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণি জাদুতে এলোমেলো হয়ে ১৬৬ রানে অলআউট হয় তারা। আর তাতেই ৭৩ রানের বড় জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু করলো পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে থাকা কুমিল্লা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২৪০ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল চট্টগ্রাম। ৭ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে তারা তুলে ফেলে ৮০। অষ্টম ওভারে মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দিয়ে সাফল্য পান লিটন দাস। দারুণ খেলতে থাকা তানজিদ হাসান তামিম বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তার আগে ২৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রানের ইনিংস উপহার দেন। জুনিয়র তামিম ফিরতেই খেই হারায় স্বাগতিকরা। রিশাদ ও মঈন আলীর ঘূর্ণি জাদুতে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে চট্টগ্রাম।
জুনিয়র তামিমের সঙ্গে ওপেন করা জর্জ ব্রাউনের কাছ থেকে আসে ৩৬ রান। এছাড়া মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করা সৈকত আলী খেলেন ৩৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। ১১ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় চট্টগ্রামের দর্শকদের কিছুটা আনন্দ দেন সৈকত। মঈন চলতি আসরে তার প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক পেয়েছেন। যা বিপিএল ইতিহাসে অষ্টম হ্যাটট্রিক। লেগস্পিনার রিশাদ ২২ রান খরচায় নেন চারটি উইকেট। মঈন আলী ২৩ রানে নেন চারটি উইকেট। বাকি দুটি উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ পাওয়া কুমিল্লার শুরুটা হয় দারুণ। দুই ওপেনার লিটন ও জ্যাকস মিলে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেছেন ৮৬ রান। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা লিটন যেভাবে চাচ্ছিলেন, সেভাবেই বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন। তবে ৩১ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৬০ রানে থেমেছেন কুমিল্লার অধিনায়ক।
এরপর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহীদ হৃদয় বিদায় নেন গোল্ডেন ডাকে। হ্যারি ব্রুকও (১০) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়লেও সেটা কমিয়ে দেন মঈন ও জ্যাকস। ৫৩ বলে এই দুই ব্যাটর মিলে ১২৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। এই জুটির ওপর ভর করেই বিপিএলের সর্বোচ্চ ২৩৯ রানের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে কুমিল্লা।
জ্যাকস প্রথম দুই ম্যাচে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করলেও আজ ছিলেন বিধ্বংসী ভূমিকায়। তার ব্যাট যেন হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর কোনও তরবারি। তার সামনে চট্টগ্রামের কোনও বোলার দাঁড়াতেই পারেনি। সবাইকে ‘কচু কাটা’ করে তুলে নিয়েছেন চলতি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বিপিএলের ৩১তম শতক।
জ্যাকস অবশ্য শূন্য রানে জীবন পেয়েছিলেন। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের দর্শকদের চার-ছক্কার বিনোদন দিয়েছেন তিনি। শহীদুল ইসলামের ওয়াইড ইয়র্কারটি লং অফ দিয়ে খেলে বিশাল ছক্কায় মাত্র ৫০ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে এটি জ্যাকসের তৃতীয় সেঞ্চুরি। চারের চেয়ে ছক্কার মার ছিল বেশি। ৫৩ বলে ৮ চার ও ১০ ছক্কায় জ্যাকস তার অপরাজিত ১০৮ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। অন্যদিকে ২৪ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন মঈন।
চট্টগ্রামের বোলারদের মধ্যে কেবল নিহাদউজ্জামান কিছুটা কিপ্টে বোলিং করেছেন। বাকি সবাই এগারোর ওপরে রান দিয়েছেন। সবচেয়ে খরুচে বোলিং করেছেন আল আমিন হোসেন। এই পেসার চার ওভার বোলিং করে ৬৯ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। দুটি উইকেট নিয়েছেন পেসার শহীদুল ইসলাম। এছাড়া সৈকত আলী নেন একটি উইকেট।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪ | সময়: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ