সর্বশেষ সংবাদ :

কুমিল্লায় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ

সানশাইন ডেস্ক: কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে প্রবেশ করা নিয়ে দলটির ‘দুই পক্ষে’র নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রতক্ষ্যদর্শীরা।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। শনিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে সকাল ১১টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলের নেতাকর্মীরা জানান, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য চলাকালে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমার নেতৃত্বে আফজল অনুসারীরা সম্মেলনস্থল টাউন হল মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারীরা তাদেরকে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা।
এ সময় অন্তত ১০টি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে; গুলির শব্দও শোনা যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় আহত হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর স্থানীয় চিত্রসাংবাদিক এম সাদেক। তার গলায় ছররা গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এম সাদেক জানান, দলটির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের গোলাগুলি চলাকালে ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বিরোধ চলছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের। আফজল খানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা এখন ওই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
শনিবারের সম্মেলনে উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রয়াত আফজল খানের অনুসারীরা। তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন বাহারের অনুসারীরা। এ অবস্থায় আফজল খানের অনুসারীরা দাওয়াত না পেলেও সম্মেলনে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন। সংসদ সদস্য সীমার সঙ্গে সম্মেলনে প্রবেশের সময় বাধাপ্রাপ্ত হন মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, প্রয়াত আফজল খানেন ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরানসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, “৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। সম্মেলনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি সভায় আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। এরপরও আমরা সম্মেলনে গিয়েছি। “টাউন হল গেইটে তারা (বাহার গ্রুপ) আমাদেরকে প্রবেশ করতে না দিয়ে গেইট বন্ধ করে দেয়। আমরা চাইলে গেইট ভেঙে প্রবেশ করতে পারতাম। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিশৃঙ্খলা না করতে।
“নেতারা বলেছেন, তোমাদের যেই প্রত্যাশা সেটার প্রতিফলন কমিটিতে থাকবে। তোমাদেরকে নিয়েই কমিটি করা হবে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা ফিরে আসছিলাম। তখন পেছন থেকে তারা আমাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে।” তানিম আরও বলেন, “পরে আমাদের কর্মীরা তাদের প্রতিহত করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণে আমাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, “আমরা এখন সম্মেলনস্থলে। আমাদের লোকজন কোনো গুলি ছোড়া বা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়নি। ঘটনার বিস্তারিত জেনে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।”
কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গুলি করা হয়নি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”
জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “সম্মেলন চলাচলকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি। সাংবাদিক কীভাবে আহত হয়েছেন, সেটা জানতে পারিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”


প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ