বাঘায় বাল্য বিয়ে,দারিদ্রতা ও পরকীয়ার কারণে বাড়ছে বিচ্ছেদ

নুরুজ্জামান,বাঘা :

সরকার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইন করা সত্বেও এর হার কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এক সমিক্ষা বলছে, কয়েক বছর আগে বৈশ্যিক করোনা মহামারি সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর প্রবনতা নতুন করে বাড়তে থাকে।যা এখনও চলমান। তবে এসব বিয়ের স্থায়িত্ব খুবই কম। এর প্রধান কারণ, অল্প বয়সে পালিয়ে বিয়ে করা,শিশুর পেটে শিশুর জন্ম,দারিদ্রতা এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক পরকীয়া । গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)এর নতুন এক জরিপ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রাক এর দেয়া তথ্য-প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২’ নামের এ জরিপ বলছে, ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার পাওয়া গেছে ২৫–এর কিছু বেশি। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ওই বছর যত জনের বিয়ে হয়েছে, সেটা সাধারণ বিয়ের হার। অথচ ২০২১ সালে এর হার ছিল ১৮ দশমিক ৫ ।

প্রতিবেদনে ২০০৬ সাল থেকে সাধারণ বিয়ের হারের গতিধারাও তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বিয়ের হার এক বছরের ব্যবধানে অনেকটা বেড়েছে। এর আগের বছর গুলোতে তা ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে সিমাবদ্ধ ছিল। তবে বৈশ্যিক করোনার কারণে ২০২২ সালে বেড়ে গিয়েছিল পালিয়ে যাওয়া-সহ সাধারণ বিয়ের হার।

সরেজমিন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকা পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে লক্ষ করা গেছে, সেখানে প্রকাশ্য দিবালকে বাল্য বিয়ে চলছে । মূলত: অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্রতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বাড়ছে এইসব বাল্য বিয়ে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে মা’হচ্ছে শিশুরা । উপজেলা সদর থেকে নদী বেয়ে অনেক দুরের একটি ইউনিয়ন হওয়ার কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি সেখানে কম। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে ঐ অঞ্চলের মানুষ ।

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২০ ও ২১ সালের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২২ সালে শহরের চেয়ে বিয়ের হার বেড়েছে, গ্রাম অঞ্চলে অনেক বেশি। জরিপে নারী ও পুরুষরা প্রথম বিয়ে কত বছর বয়সে করেছেন, তার একটি গড় হিসেব তুলে ধরা হয়। বিবিএস বলছে, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৩ থেকে ২৪ বছর। আর নারীর ক্ষেত্রে তা ১৮ দশমিক ৪ বছর। এদিক থেকে শহরে পুরুষ ও নারীদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স একটু বেশি হলেও গ্রামের অবস্থান একেবারেই কম।

এদিকে বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপ করেছে বিবিএস। এ জরিপে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার পাওয়া গেছে। একটি হলো স্কুল গামী শিক্ষার্থী অর্থাৎ বাল্য বিয়ে। এ সব বিয়েতে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার অনেক বেড়েছে। আর অন্যটি সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার এবং পরকিয়া সম্পর্কীত বিয়ে।

বিবিএস বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ তখ্য সামনে এনেছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা ২২ শতাংশ। এছাড়াও রয়েছে ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদি। ঐ জরিপ বলছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ দিক থেকে গ্রামের চিত্র আরো বেশি ভয়াবহ।

বাঘা উপজেলার একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রাক বর্তমানে কাজ করছে পারিবারিক সহিংসতা ,বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ও দাম্পত্য কোলহ নিয়ে। এ দিক থেকে তাদের জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে শালিশী বৈঠকের মাধ্যমে প্রায় চার শতাধিক পারিবারিক কোলহ নিরসন করেছেন তারা। একই সাথে সকল দেনা-পাওনা মিটিয়ে তিন শতাধিক ছেলে-মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ করিছেন। এ সকল বিচ্ছেদের প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে, পরকিয়া ,পারিবারিক কোলহ এবং দারিদ্রতা।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, একজন শিশুর পেট থেকে আরেকজন শিশুর জন্ম হবে এটা আমাদের কাম্য নয়। সরকারি ভাবে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিতে বারণ এটা সকলের জানা। তার পরেও অতি গোপনে শুধু বাঘার চরাঞ্চল নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকাতে এর কম-বেশি প্রভাব রয়েছে। আর এসব কারনে অকালে অনেক সংসার ভেঙ্গেও যাচ্ছে। এ জন্য অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্রতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ অন্যতম বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,এটি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনা। তিনি এ বিষয়ে সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি,এলাকার অভিজ্ঞ মহল,ইমাম এবং শিকক্ষদের বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বেশি-বেশি করে বক্তব্য উপস্থাপনের আহবান জানান।

 

 

সানশাইন/সোহরাব

 

 


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪ | সময়: ৫:১৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine