সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে খরায় গাছ থেকে পড়ে মারা যাচ্ছে বকের ছানা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে চলমান তাপপ্রবাহে সদ্য উড়তে শেখা বকের ছানাগুলো গাছ থেকে পড়ে মারা যাচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপতালের পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশে আজ সোমবার ১০টির বেশি মরা বকের ছানা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গত তিন দিন থেকে এমনটি হচ্ছে। মানুষজন পানি খাইয়ে এই পাখির বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে পাখিদের কলোনি গড়ে উঠেছে। এখানের বড় গাছগুলোয় পাখিরা বাসা বেঁধে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। আবার ডিম দেওয়ার সময় ফিরে আসে। বর্তমানে হাসপাতাল চত্বরের গাছে গাছে বকের বাসা রয়েছে।
হাসপাতালের কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রায় প্রতিটি বাসায় বকের ছানা রয়েছে। সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চাগুলো প্রখর তাপ সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে উড়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় পিপাসায় কাতর হয়ে অনেক বাচ্চা নিচে পড়ছে। উড়তে না পেরে কোনোটি মারা যাচ্ছে। পানি খাওয়ালে কোনোটি আবার উড়ে যাচ্ছে।
সোমবার দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের গাড়ির চালক সোহেল, রিপন ও পরিচ্ছন্ন কর্মচারী বিকাশ পড়ে যাওয়া একটি বকের ছানাকে পানি খাইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে ভাজা বিক্রি করেন রোকনুজ্জামান নামের এক তরুণ। তিনি বললেন, দুই-তিন দিন ধরে গাছ থেকে বক পড়ছে। একটু পানি খাইয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তিনি রোববার দিন তিনটি বককে পানি খাইয়ে দিয়েছেন। তারপর উড়ে গেছে।
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বললেন, একটা বক তাঁর সামনেই রাস্তায় পড়ে ছিল। তিনি বোতল থেকে একটু পানি খাইয়ে দিয়েছেন। তারপর একাই উড়ে গেছে। তার পাশেই রাস্তার নালার ওপরে সাটারিংয়ের কাজ করছিলেন মিস্ত্রি রজব আলী।
তিনি জানালেন, একটি বক নালার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। স্রোতে যাতে ভেসে না যায়, সে জন্য এক ডানা দিয়ে কিছু একটার সঙ্গে পাখিটা নিজেকে আটকের রেখেছিল। তিনি তুলে ওপরে রেখেছিলেন। কিছুক্ষণ পরে উড়ে যায়। রোজব আলী বলেন, তাঁর ধারণা পানিতে পড়ার পরে বকটি সুস্থ হয়েছিল। তাই উড়ে যেতে পেরেছে।
গাছ থেকে পাখি পড়ে মারা যাওয়ার খবর রোববার পেয়েছেন রাজশাহী বনবিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, সেদিনই লোক পাঠিয়েছিলেন। পড়ে যাওয়া পাখিরা উড়তে না পারলে উদ্ধার করে তাদের রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তার লোকজন তিন-চারটি পাখিকে শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে আবার উড়িয়ে দিয়েছে।
জাহাঙ্গীর কবির বলেন, প্রখর তাপের কারণে সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আর হয়তো ফিরতে পারছে না। তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।
প্রচণ্ড গরমের কারণে দুপুরে রাস্তাঘাটে মানুষকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখা গেছে। কেউ রাস্তার মধ্যে দাঁড়াতে পারছিলেন না। রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনাও কম। গত ৩১ মার্চ থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ ৩০ মার্চ রাজশাহীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তার পর থেকে বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রা বাড়ছেই।


প্রকাশিত: মে ১, ২০২৪ | সময়: ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ