সর্বশেষ সংবাদ :

নওগাঁয় হিটস্ট্রোকে দুই শ্রমিক ও শিক্ষকসহ তিন জনের মৃত্যু

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে আবারো ধান কাটা এক শ্রমিকের মুত্যু হয়েছে। সোমবার (২৯) রাত তিন টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসান গাইনি নামে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত চার দিনে জেলায় দুই ধান কাটা শ্রমিক ও এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
হাসান গাইনি (৪১) ধান কাটা শ্রমিক নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দূরদূরি গ্রামের আমজাদ গাইনির ছেলে।
জানা গেছে, গত বৃগস্পতিবার দুপূরে রাণীনগর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের সুবল সরকারের বাড়িতে ধান কাটার জন্যে ১৫-১৬ জন শ্রমিক দূরদূরি গ্রাম এলাকা থেকে আসেন ধান কাটতে। এরপর গত রবিবার সকাল ১০ টার দিকে মাঠে ধান কাটার সময় হাসান গাইনির তীব্র গরমে হঠাৎ করে জ্বর ও মাথার সমস্যা দেখা দেয়।
এমতাবস্তায় মাঠ থেকে অন্য শ্রমিকরা তাকে বাড়ি নিয়ে আসে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেন। কিন্তু রাতে ১০টার দিকে হাসান গাইনির অবস্থা বেগতি হওয়ায় তাকে দ্রুত নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৯) রাত তিন টার দিকে তিনি মারা যান।
নওগাঁ সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ফজলুল হক জানান, গত রবিবারে রাতে হাসপাতালে নিয়ে ওই শ্রমিক নিয়ে আসা হয় তখনই তার অবস্থা খারাপ ছিলো। রুগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ট করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে রাজশাহীতে নিতে চাননি। সোমবার ভোর রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
চিকিৎসক ফজলুল হক অপরপ্রশ্নে আরো জানান, প্রাথমিক ভাবে রোগীর লোকজনদের কাছ থেকে শুনে জানা গেছে, তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়েছে। তবে ওই রোগি ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য রোগেও তিনি আক্রান্ত ছিলেন। ফলে তিনি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
এদিকে গত শনিবার নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা গ্রামের সোলাকুরা মাঠে তীব্র তাপদাহে জমিতে দুপূরে ধান কাটার সময় হিট স্ট্রোকে রেজাউল ইসলাম (৪৬) নামে এক ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শ্রমিক রেজাউল উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের কছির উদ্দিনের ছেলে।
রাণীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বলেন, শ্রমিক রেজাউলের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে নওগাঁর নিয়ামতপুরে শুক্রবার বিকেলে তীব্র গরমের মধ্যে হিটস্ট্রোকে সহকারী শিক্ষক ও পেশ ইমাম শাহাদাত হোসেনের (৪২) মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। শাহাদাত হোসেন উপজেলার রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামের মৃত বজরুক আলীর ছেলে।
পারিবারিক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শাহাদাত হোসেন বালাতৈড় দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামের জামে মসজিদের পেশ ইমাম ছিলেন। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে হিটস্ট্রোক হয় তার। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষক শাহাদাত হোসেনের মৃত্যু হয়।
নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব উল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় শাহাদাত হোসেনের স্ট্রোকের লক্ষণ পাওয়া গেছে। তার ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেশি ছিলো।
উল্লেখ্য, নওগাঁ জেলায় গত এক মাস ধরে প্রায় ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি এবং দুপূর ১২ টায় ৩৮ দশমিক দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন মনির আলী আকন্দ জানান, নওগাঁয় তীব্র গরমে এখন পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে।
তিনি আরো জানান, এই তীব্র গরমে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন এবং প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে না যাওয়া, পর্যাপ্ত পানি ও তরলজাতীয় খারাব খাওয়ার পরামর্শ দেন।


প্রকাশিত: মে ১, ২০২৪ | সময়: ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ