সর্বশেষ সংবাদ :

সবার বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সামনের দিকে যেতে চাই: আসাদ

স্টাফ রিপোর্টার: রাতের অন্ধকারে লিফলেট বিলি করে এই অঞ্চলের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না বলে হুশিয়ার করেছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিতলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অতীতের যে কোনো সরকারের চেয়ে শেখ হাসিনা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা করেছেন। বৃথা মানুষকে লিফলেট দিয়ে অথবা ফোনে হুমকি দিয়ে লাভ নেই। এই বাংলাদেশের মানুষ অতীতের দুইটি নির্বাচন একদম লড়াই করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দরকার। রাতের অন্ধকারে লিফলেট বিলি করে এই অঞ্চলের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই অঞ্চলের কৃষকের কী অবস্থা ছিল? একবার বিবেচনা করে বলবেন? আমি তো সেই সময় মিটিং-মিছিলে কৃষকের যে উত্তাল ভূমিকা দেখেছি, সারের জন্য এই অঞ্চলের কৃষকসহ গোটা বাংলাদেশের কৃষক ফুঁসে উঠেছিল। তাই তো সার চাইতে গেলে কৃষকের বুকে গুলি করে হত্যা করেছিল সেই সময়ের সরকারের পেটোয়া বাহিনীরা। এই অঞ্চলের বিবেকবান শিক্ষক সমাজ একবার কি বুকে হাত দিয়ে স্মরণ করবেন? আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই শিক্ষক সমাজের আর্থিক অবস্থা কোথায় ছিল?
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ বলেন, আজ থেকে ১৫ বছর আগে উপস্থিত মা-বোনেরা কি ভেবেছিলেন, যেই সন্তানের পরিচয় মিলে পিতার নামে সেই সন্তানের নামের সাথে মাতা ও পিতার নাম একসাথে হবে? এটি তো শেখ হাসিনা আপনাদের দিয়েছেন। আমরা যখন লেখাপড়া করেছি নতুন ক্লাসে উঠেছি নতুন বই চোখে দেখি নি। আজকে কোনো পিতা-মাতাকে সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। শেখ হাসিনার ঘাম আর শ্রমে জানুয়ারি মাসের এক তারিখে নতুন বই আপনার সন্তানের মুখে হাসি ফুটে। এতেই ক্ষান্ত হন নি, শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সন্তান আপনার, লেখাপড়ার দায়িত্ব আমার।’
তাই তো প্রত্যেক মাসের শুরুতে যার সন্তানরা স্কুলে পড়ে, প্রত্যেকটি মায়ের মোবাইলে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়। শুধু কি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সন্তানের মায়েদের মোবাইলে টাকা যায় নাকি বাংলাদেশের সমস্ত সন্তানরা নতুন বই আর শিক্ষা উপবৃত্তি পায়? যদি সবাই পায় তবে আপনি যে দলই করুন না কেন, আপনার সন্তানের মুখে হাসি ধরে রাখার জন্য বিবেকের রায়টি নৌকায় চান নৌকার প্রার্থী আসাদ।
আসাদ বলেন, যে মানুষটি কোনোদিন কল্পনাও করে নি হয়তো তার নিজের বাড়ি হবে। সেই মানুষটিকে ডেকে নিয়ে শেখ হাসিনা দুই কাঠা জায়গাসহ আধা পাকা বাড়ি করে দিয়েছেন। যেই মানুষটিকে শেখ হাসিনা সম্মানিত করেছেন সেই মানুষের বিবেকের রায়টি কি নৌকায় চাইতে পারি না? এই অঞ্চলের যারা মাদ্রাসার শিক্ষক আছেন আপনারা কি কখনও কল্পনা করেছিলেন, আপনাদের মর্যাদা স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গায় যাবে? শেখ হাসিনা তাদের সেই সম্মানে সম্মানিত করেছেন। পৃথিবীর কোনো মুসলিম দেশ পারে নি, একসাথে ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করতে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির জায়গায় বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিধবা মা থেকে শুরু করে শিশু সন্তান পর্যন্ত, যে সন্তানটি আজকে ভূমিষ্ট হবে তার মাকেও তো মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে, পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শেখ হাসিনাই তো হৃষ্টপুষ্ট করে রেখেছে। যে দলই করুন না কেন আপনারা, আপনার জীবন চলার পথে, আপনার জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে শেখ হাসিনার অনন্য পরিশ্রমের ফসল।
পবা-মোহনপুর আসনের নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, এই অঞ্চলে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির যে বাতায়ন তৈরি হয়েছে সেই বাতায়নকে আরও সামনে নিতে চাই। সেই কারণেই আপনারা শেখ হাসিনাকে আরেকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে এসে উন্নয়নের গতিধারাকে সমৃদ্ধ করতে চান, আপনার বিবেক যদি বলে অতীতের সমস্ত সরকারের চেয়ে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে আপনারা ভালো আছেন, শান্তিতে আছেন, সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না লাশ হয়ে ফিরবে নাকি সুস্থ হয়ে ফিরবে, সেই চিন্তার জায়গা শেখ হাসিনা দূর করেছেন, তবে যে যে দলই করুন না কেন আপনার বিবেকের রায়টি নৌকায় চাই।
আগামী দিনে নতুন বছরে নতুন প্রত্যয়ে নতুন আশায় পবা-মোহনপুরে উন্নয়নকে প্রতিষ্ঠিত করার দীপ্ত শপথে যদি আপনাদের ভোটে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে যেতে পারি, আপনাদের সবার বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সামনের দিকে পথ চলবো। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আগামী দিনে মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করে এই অঞ্চলের উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির গতিধারা শেখ হাসিনাকে দিয়ে ত্বরান্বিত করার প্রতিজ্ঞা করেন আসাদ।
বিশাল নির্বাচনী সভায় সভাপতিত্ব করেন দামকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
দামকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক পল্টুর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি বেগম আখতার জাহান, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, সদস্য ফারুক হোসেন ডাবলু, এসএম তৌহিদ আল হাসান তুহিন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান বাবু, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আলী আজম সেন্টু, রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া পূর্ব থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান কালু, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আব্দুস সোবহান, রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ তাজবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও পবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী খান, রাজশাহী জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ খান প্রমুখ।
এরআগে সকালে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার খোলাগাছি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আজ থেকে তিন দিন আগেই জানুয়ারি মাসের এক তারিখে নিশ্চয়ই এই স্কুলেও বই উৎসব হয়েছে। এই অঞ্চলের যারা জনপ্রতিনিধি, স্কুল পরিচালনা কমি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক তাদের অনেকেই এসেছেন, বই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অতীতেও তো অনেক সরকার ছিল। কেউ কি বলেছিল, আপনার সন্তানের শিক্ষার অধিকার আছে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো আমাদের কোমলমতি সন্তানদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, শেখ হাসিনা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনারা ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিবেন। কাকে ভোট দিবেন সেটা আপনাদের বিষয়। আমরা এসেছি শেখ হাসিনার দলের মানুষ হিসেবে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে। আরও অনেকেই প্রার্থী আছেন, তারাও এসেছেন অথবা আসবেন, তারাও হয়তো তাদের কথা বলবেন। আমি সবার কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মঙ্গল হয়, দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদ বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ভাবনা শেখ হাসিনা ভাবে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের টাকায় নিজের বিবেক, বুদ্ধি, মেধা ও সততা দিয়ে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষিত করার প্রয়াস গ্রহণ করেছে। এই বই উৎসবে শুধু কি আওয়ামী লীগের সন্তানরাই বই পায় নাকি এই অঞ্চলের সমস্ত সন্তানরাই বই পায়? বই উৎসবে এক ক্লাস থেকে নতুন ক্লাসে উঠার যে আনন্দ, তার সাথে নতুন বই প্রাপ্তি আরও বেশি আনন্দের। সেই আনন্দ ওই ছাত্র বা ছাত্রীর জীবন ছাড়িয়ে তার পরিবারের উপরেও প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব ফেলার পেছনে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার অবদান আছে। এই সন্তানকে শুধু বই দিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষান্ত হন নি, তাদের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা প্রতিমাসে মায়ের মোবাইলে চলে আসে। সেই টাকা কি শুধু আওয়ামী লীগের সন্তানের মায়েরা গ্রহণ করে নাকি এই এলাকার সব সন্তানের মায়েরাই গ্রহণ করে?
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ বলেন, পৃথিবীতে এক মাত্র শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক, যিনি পরিষ্কারভাবে জাতির সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘সন্তান আপনার, লেখাপড়ার দায়িত্ব আমার।’ এই কথা কি অতীতে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বলতে পেরেছে, পারে নি। সেখানে তো আমাদের হক আছে। আপনি যে দলই করুন না কেন, শেখ হাসিনার যে ত্যাগ ও শ্রম, সেই শ্রমের বিনিময়ে আপনার সন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং দেশ গঠনে নিজেকে ভূমিকা রাখবে। সেই সন্তান আপনার জীবনকে আলোকিত করবে, এই অঞ্চলের সমাজ এবং মানুষের আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কে না চায় তার সন্তান আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠুক। সেই গড়ে ওঠার পেছনে যদি আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অবদান থাকে, তাদের বিবেকের রায়টি নৌকায় চাইতেই পারি। এটা আমাদের হক।
সমস্ত ধর্মই বলে, উপকারীর উপকার স্বীকার করে তার সুযোগ থাকলে ঋণ শোধ করা নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব। নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্বের জায়গা থেকে আমাদের তো হক আছে আপনাদের প্রতি। এই ইউনিয়নের অধিকাংশই বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, অন্তঃসত্ত্বা ভাতা পেয়ে থাকেন। এই ভাতা কি শুধু আওয়ামী লীগের বয়স্করাই পান নাকি এই সমাজের যারাই বাংলাদেশের নাগরিক সবাই পান। শেখ হাসিনা কি আওয়ামী লীগ দেখেন না বাংলাদেশ দেখেন? যেই মানুষটি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন তার তো হক আছে, আমরা তার প্রতিনিধি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি বলেও উল্লেখ করেন এমপি প্রার্থী আসাদ।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আল মামুনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান, সদস্য সুরঞ্জিত কুমার সরকার, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলমগীর মোর্শেদ রঞ্জু, মোহনপুর উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এনামুল হক, রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবলু রহমান, মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আলী, সদস্য জামাল হোসেন বিশ্বাস, মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মমিন শাহ গাবরু, রায়ঘাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েজ উদ্দীন প্রমুখ।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৪ | সময়: ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর