চারঘাটে বড়াল নদী শুকিয়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে

চারঘাট প্রতিনধি :
খরস্রোতা বড়াল নদী শুকিয়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। নাব্যতা হারিয়ে এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।সেখানে চাষাবাদ করছেন স্থানীয়রা। নদীটির নাম প্রমত্তা বড়াল। পদ্মায় জন্ম হয়ে যমুনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে।২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর পেট চিরে জন্মেছে নদী-নালা, খাল-বিল। পদ্মা-যমুনার পানি এই নদী হয়েই গড়িয়ে পড়তো উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন কৃষি জমিতে। অথচ ৫’শ ফিট প্রস্থের নদীটির উৎস মুখে ১৯৮৪ সালে নির্মীত হয়েছে তিন কপাটের একটি সরু স্লুইসগেট। সেই থেকে বড়াল তার যৌবন হারিয়েছে।

সে সময় ওই বাঁধের কারণে উত্তাল পদ্মার পানি আর বড়ালে গড়ায়নি। এতে করে খরায় পড়ে ভাটি অঞ্চলের ৪ জেলা ও ৮ উপজেলার নদী-নালা। ভাটি এলাকার মানুষের দাবির মুখে ৫’শ ফিট প্রস্থের ২১ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহের বড়ালের উৎসমুখে ৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহের ৩০ ফিট প্রস্থের জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে নিয়ন্ত্রিত পানি প্রবাহের ফলে খরস্রোতে বড়াল তার জৌলুশ হারায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,উজানে বাঁধ দিয়ে ইরিগেশনের জন্য সেচ দেওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদীর বুকে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে নদের বুকে পলি জমে জমে উঁচু হয়েছে, দু’পাড় চেপে গেছে এবং নদের পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। নদের চর ভূমি গ্রাসীরা দখল করে নিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮৪ অর্থবছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে স্লুইসগেট নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয় ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদ শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিনত হয়েছে।
বর্ষায় কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদে পরিনত হয়। এ সুযোগে এলাকার কৃষকরা নদের বুক জুড়ে ফসলের আবাদ করেন। পরিণত হয় গবাদী পশুর চারন ক্ষেত্রে।

স্থানীয় জেলে সুন্টু হালদার প্রতিনিধিকে জানান,এক সময়ে এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয় না। বড়ালে পানি না থাকায় জেলেরা আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই পুন:খনন করে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা।

সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পূনর্ভবা নদী এখন মরাখালে পরিণত হওয়ায় পূনর্ভবা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অসংখ্য হাটবাজার এখন হয়েছে বিরাণ অঞ্চল, কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধূ ধূ প্রান্তরে, জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে বিলীন আর সে সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে প্রায় বন্ধ। এসবই এখন কালের সাক্ষী।

এ সম্পর্কে পাউবোর নাটোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ১০৪ কিলোমিটার নদ খননের জন্য ২ হাজার ১৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি দুই বছর ফাইলবন্দী ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইল আবার সচল হয়েছে।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ | সময়: ৬:১৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine