চোখ ছলছল আর হৃদয় ছোঁয়া এক গল্প

স্পোর্টস ডেস্ক: এশিয়ান গেমস মানে বড় কিছু। অলিম্পিকের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুমাত্রিক ক্রীড়া ইভেন্ট। এবার অবশ্য অ্যাথলেট অংশগ্রহণের দিক দিয়ে এশিয়ান গেমস ছাড়িয়ে গেছে অলিম্পিক গেমসের আসরকেও। ৪৫টি দেশের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার অ্যাথলেট অংশ নিয়েছেন এবারের এশিয়ান গেমসে। যারা ৪০টি খেলার ৬১টি ডিসিপ্লিনের ৪৮৩টি ইভেন্টে পদকের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গেমসে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা ঘটনা। কিন্তু সবগুলোই কি আর হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে? অশ্রুসিক্ত করতে পারে দু’নয়ন? এবার সেটাই হলো। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটি ঘটনা ঘটেছে সাঁতারে। এশিয়ান গেমসে মেয়েদের সাঁতারের ৫০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেন চীনের তারকা সাঁতারু ঝাং ইউফেই। তিনি সময় নেন ২৫.১০ সেকেন্ড। ২৫.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে এই ইভেন্টে রৌপ্য জিতেন তার স্বদেশি ইউ ইতিং। আর জাপানের ইকি রিকাকো ২৬.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে জেতেন ব্রোঞ্জ পদক।
পুরস্কার নেওয়ার পর জাপানের সাঁতারু রিকাকো কাঁদছিলেন। সে সময় স্বর্ণ পদক গলায় ঝুলিয়ে সেখানে হাজির হন ইউফেইও। রিকাকোকে কাঁদতে দেখে তিনিও কান্না সংবরণ করতে পারেননি। অবুঝ শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এরপর রিকাকোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। চারদিকে পিনপতন নিরবতা। এমন পরিস্থিতিতে উল্লাস আর করতালিতে গ্যালারি ভারী হয়ে উঠে।
এমন কান্নার কারণ উপস্থিত অনেকেই হয়তো বুঝতে পারেননি। কিন্তু তাদের এই কান্নার রয়েছে হৃদয় ছোঁয়া কাহিনী। ২০১৮ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে পুল কাঁপিয়েছিলেন রিকাকো। জিতেছিলেন রেকর্ড ৬টি স্বর্ণ। তার পাশাপাশি দুটি রৌপ্য। হয়েছিলেন এশিয়া গেমসের সবচেয়ে মূল্যবান অ্যাথলেট।
তখন রিকাকোর বয়স ছিল ১৮ বছর। পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত- যারা সাঁতার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন তারা জেনে যান রিকাকোর নাম। ধরেই নেওয়া হয়েছিল ২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও পুল কাঁপাবেন তিনি। নিঃসন্দেহে জিতবেন একাধিক স্বর্ণ। কিন্তু ২০১৯ সালে নিরাময়ের অযোগ্য রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া ধরা পড়ে তার। বদলে যায় তার জীবনের গল্প। অলিম্পিকে খেলা ও স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন দেখা রিকাকো ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে করতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তার স্বপ্নগুলো ফিঁকে হয়ে যেতে থাকে। উজ্জ্বল ভবিষ্যত তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতে পান। মৃত্যুর শঙ্কাও উঁকি দিতো ক্ষণে ক্ষণে।
কিন্তু নানা সংগ্রাম আর চিকিৎসা শেষে ক্যান্সারকে জয় করে ২০২০ সালে আবার সাঁতারের পুলে ফিরেন তিনি। আর এবার সাঁতরালেন এশিয়ান গেমসে। জিতলেন পদকও। যদিও তার সেরাটা দিতে পারেননি নানা কারণে। কিন্তু পাঁচ বছর আগের এশিয়ান গেমসের সবচেয়ে মূল্যবান অ্যাথলেট ক্যান্সার জয় করে ফিরেছেন এবং একটি পদকও জিতেছেন এটা তার জন্য বিরাট কিছু। অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
রিকাকো হয়তো ভাবেননি তিনি আবার পুলে ফিরতে পারবেন। ইউফেইও হয়তো ভাবেননি। কিন্তু সবার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে পুলে ফিরে জিতলেন পদক। তার কঠিন সময়কে জয় করে পুলে ফেরাটাকে শ্রদ্ধা জানাতেই রিকাকোর সঙ্গে কেঁদে ফেলেন ইউফেইও। ২০১৮ সালে রিকাকোর গড়া ছয়টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড এবার দখলে নিয়েছেন ইউফেই। সুস্থ থাকলে হয়তো এটা দখলে নেওয়া তার জন্য কঠিনই হতো বটে। কারণ, পাঁচ বছরে অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে আরও শক্তিশালী হয়ে পুলে ফিরতেন রিকাকো।
২০১৯ সাল থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া রিকাকো এখন স্বপ্ন দেখছেন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে খেলার। যদিও তিনি এখনও তার সেরা ফর্মে ফিরতে পারেনি। কিন্তু মৃত্যুকে যখন জয় করে এসেছেন তখন অলিম্পিক জয়ের স্বপ্ন তিনি দেখতেই পারেন। তাই নয় কী?


প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ