শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-৩ (পবা- মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরিতে ইউসেপ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইউসেপের বিভিন্ন ট্রেড থেকে কারিগরি শিক্ষা অর্জন করে জীবন নির্বাহ করাসহ স্বাবলম্বি হচ্ছেন। অনেকে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্বের হাত থেকে যুব সমাজকে বাঁচাচ্ছেন।
বুধবার (১ মে) রাজশাহীতে দুইদিন ব্যাপি ইউসেপ বাংলাদেশের ৫০-বছরপূর্তি উদযাপন, যুব-যুবাদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে “চাকুরি মেলা-২০২৪” এবং রাজশাহীর উদীয়মান উদ্যোক্তাদের জন্য “উদ্যেক্তা মেলা”-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নিউজিল্যান্ডের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার সমগ্র জীবন বাংলাদেশের মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার কার্যক্রম তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন। দ্রুত উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত ইউসেপ কাজ করে চলেছে। দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইউসেপ।
সংসদ সদস্য বলেন, ১৯৭২ সালে লিন্ডসে এলান চেইনী সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইউসেপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদার সহযোগিতা তিনি লাভ করেছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকার সেগুনবাগিচায় ইউসেপের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কম মূল্যে অফিস বরাদ্দ দিয়েছিলেন। যে পথ-শিশুরা সেদিন এই সহযোগিতা পেয়েছিল, তারা নিজ প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে আজ সমাজ ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
শেষে তিনি বলেন, ‘ইউসেপ বাংলাদেশের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ইউসেপে আমাকে দেবার মত অনেক কিছু আছে। আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠিকে বেশী বেশী দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে গুরুত্ব দিবে আমি আশাবাদী। এতে অনেকটা বেকার কমে যাবে। দেশে ক্রমেই বেকার মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধ্য, শক্তি থাকলেও অনেকেই বেকার যুবক-যুবাদের কাজে লাগাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে ইউসেপ এসব বেকার মানুষদের দক্ষ করে গড়ে তুলছে। কাজের মাধ্যমে মানুষের সম্মান বাড়ছে’।
অনুষ্ঠানে ইউসেপ বাংলাদেশ-এর ডিরেক্টর-ফাইন্যান্স এ্যন্ড কম্পøায়েন্স নাজমুন নাহারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ইউসেপ রাজশাহীর ইনক্লসিভ কমিউনিটি নেটওয়ার্ক কমিটির সম্মানিত চেয়ারপারসন জনাব প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ইউসেপ রাজশাহী উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপারসন প্রফেসর মহা: হবিবুর রহমান, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর-রাজশাহীর পরিচালক আমিনুল হক।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউসেপ বাংলাদেশ বোর্ড অব গভর্নরস-এর সাবেক চেয়ারপারসন ও ইউসেপ এসোসিয়েশন-এর সদস্য পারভীন মাহমুদ এফসিএ। উপস্থিত ছিলেন ইউসেপ বাংলাদেশ, রাজশাহী অঞ্চলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, নিয়োগকর্তা, কমিটির সদস্যবৃন্দ, উদ্যেক্তা উন্নয়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ, ইনক্লসিভ কমিউনিটি নেটওয়ার্ক কমিটির সদস্যবৃন্দ, ইউসেপ রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষক, ছাত্র/ছাত্রী, কর্মকর্তাবৃন্দ, ইউসেপ রাজশাহীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিক প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, এক ঝাঁক উদীয়মান উদ্যোক্তাসহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মকর্তাবৃন্দ। অতিথিবৃন্দ ইউসেপ বাংলাদেশের ৫০-বছরপূর্তিতে কেককাটেন ও বেলুন উড়িয়ে এ অনুষ্ঠানের উদ্বাধন করেন। সবশেষে ইউসেপ রাজশাহী অঞ্চলের ছাত্র/ছাত্রীদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংকৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই জব ফেয়ার-২০২৪ এ আরএফএল গ্রুপ-ঢাকা, ডাচ বাংলা প্যাক লিঃ, গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ, মেঘনা গ্রুপ, রহিম আফরোজ, বিডিজবস, প্রান এ্যাগ্রো লিঃ-নাটোর, কিষোয়ান এগ্রো প্রোডাক্টস লিঃ-নাটোর, প্রাণ এ্যাগ্রো লিঃ-রাজশাহী, বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-রাজশাহী, এজি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ-রাজশাহী, আমান জুট ফাইবারস লিঃ-রাজশাহী, যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাগ্রো গ্রুপ-রাজশাহী, এসবি ল্যাবরেটরিজ-রাজশাহী, জেবিডি আইটি-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক-রাজশাহীসহ দেশের প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের প্রয়োজনীয় কর্মীর চাহিদা নিয়ে চাকুরি মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
চাকুরীপ্রার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে বায়ো-ডাটা প্রদান ও ইন্টারভিউ-এ অংশগ্রহণ করে। উক্ত চাকুরি মেলার মাধ্যমে রাজশাহীর তিন শতাধিক বেকার যুবাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ইউসেপ বাংলাদেশ-এর কর্মকান্ডের ভুয়সি প্রশংসা করেন এবং ইউসেপ বাংলাদেশ-এর কর্ম কান্ডে সহযোগিতা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সাল থেকে ইউসেপ-বাংলাদেশ শহরের সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।