আমের অফ ইয়ারে খরার বাগড়ায় বাড়ছে খরচ, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও শংসয়

স্টাফ রিপোর্টার: টানা খরায় পুড়ছে বরেন্দ্র ভূমির রাজশাহী। ঠাঠা সূর্য মাথার উপর ঢালছে আগুন তাপ। আর টানা তাপদাহের ফেটে যাওয়াসহ ঝরে পড়ছে আম। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমের অফ ইয়ারে খরার বাগড়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জণে হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, খরা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশী আম ঝরে গেছে। এছাড়াও বেশ কিছু আম ফেটেও গেছে অতি গরমের কারণে। তবে যারা খরার শুরু থেকে বাগানের যন্ত নিয়েছে; বিশেষ করে নিয়মিত সেচ ও স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিছে তাদের গাছের আম ঠিক-ঠাক রয়েছে।
বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। বৃষ্টিরও দেখা নেই। রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ উঠে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বুধবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, মুলতঃ গত ৩১ মার্চ থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুরু হয়। সেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ৩০ মার্চ রাজশাহীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তার পর থেকে বৃষ্টির দেখা নেই। তবে বুধবার দিবাগত রাত ১টার পর রাজশাহী কিছু কিছু এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আবহাওয়া অফিস এলাকায় বৃষ্টি না হাওয়া তা পরিমাপ করা সম্ভাব হয়নি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল ছিল। মৌসুমের শুরুর দিকে ঘন কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর যে খরা চলছে তাতে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশী আম ঝরে গেছে। বিশেষ করে বড় গাছগুলোতে বেশী আম ঝরেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বলেন, সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আম টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা আম চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
নগরীর খড়খড়ি বাইপাসের আমচাষি শরিফুল ইসলাম কাদু বলেন, আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে আর হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছে। এছাড়াও অতি খরার কারণে আম ফেটেও যাচ্ছে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সেচ ও আমগাছে স্প্রে করছি। ফলে এ বছর আমার উৎপান যেমন কম হবে তেমনি খরচও বাড়বে।
কাশিয়াডাঙ্গার এনতাজ আলী বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। সে সঙ্গে উৎপাদনও কমবে। গাছে আম না থাকায় মৌসুমের শুরু থেকে দাম চড়া থাকবে।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আমের অফ ইয়ার। ফলে এবার আম রয়েছে ৬০ শতাংশ গাছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন কমবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আম রক্ষায় এখন নিয়মিত সেচ প্রয়োজন। সেচের ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে। তালে যে আম আছে তা রক্ষা করা যাবে।
ড. শফিকুল ইসলাম জানায়, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এখন থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল।


প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৪ | সময়: ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ