সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বরিশালের টানা তৃতীয় জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে দলকে এনে দিলেন বড় সংগ্রহ। পরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখার কাজটিও নিপুণভাবে করলেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে টানা তৃতীয় জয় পেল ফরচুন বরিশাল।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ১২ রানে হারিয়েছে বরিশাল। ১৭৮ রানের লক্ষ্যে কুমিল্লার ইনিংস থামে ১৬৫ রানে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে হার দিয়ে আসর শুরুর পর বরিশালের টানা তৃতীয় জয় এটি। পয়েন্ট টেবিলে দুইয়ে উঠল তারা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা হারল তিন ম্যাচের সবগুলোয়।
ব্যাটিংয়ে ৪৫ বলে ৮১ রানের পাশাপাশি ৩ ওভারে স্রেফ ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। তার এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্যের পর ম্যাচ সেরা নিয়ে হয়তো দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি দায়িত্বরতদের। বরিশালের এই জয়ের ম্যাচে মিশে গেছে এডিআরএস বিতর্ক। কুমিল্লার ইনিংসের ১৪তম ওভারে ইফতিখার আহমেদের বলে জাকের আলিকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার।
লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছে ধরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রিভিউ নেন জাকের। ধারাভাষ্য কক্ষ থেকেও বলা হচ্ছিল, বেঁচে যাবেন কুমিল্লার কিপার-ব্যাটসম্যান। টিভি রিপ্লেতেও দেখা যায়, ইফতিখারের ওই ডেলিভারি পড়েছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন টিভি আম্পায়ার। চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে মাঠ ছাড়েন জাকের।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে এই ম্যাচে আর ঝড়ো শুরু এনে দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। চতুর্থ ওভারে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৯ বলে ৬ রান করেন তিনি। আরেক ওপেনার এনামুল হকও হাত খুলে খেলতে পারেননি। রানের গতি বাড়ানোয় মনোযোগ দেন তিন নম্বরে নামা চতুরাঙ্গা ডি সিলভা। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ২টি করে চার-ছয় মেরে ১২ বলে ২১ রান করে পাওয়ার প্লের শেষ বলে আউট হন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার।
এরপর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন সাকিব। মুখোমুখি প্রথম বলে কাট শটে চার মেরে করেন শুরু। নাঈম হাসানের করা পরের ওভারে একইরকম শটে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। আর শেষ বলে হাঁকান ছক্কা। সাকিবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে পারেননি এনামুল। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ২০ রান করতে খেলেন ২০ বল। ইব্রাহিম জাদরানকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন বরিশাল অধিনায়ক। ২ চার ও ১ ছয়ে ইব্রাহিম করেন ২৭ রান।
বাকিদের যাওয়া-আসার মাঝে একপ্রান্তে অবিচল থেকে দলকে এগিয়ে নেন সাকিব। ইনিংসের ১৬তম ওভারে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের ২৮তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। ৫ চার ও ২ ছয়ে এই মাইলফলক ছুঁতে খেলেন ৩১ বল। এরপর আরও আগ্রাসী হয়ে পরের ১৪ বলে করেন ৩১ রান। সাকিবের তাণ্ডব মূলত যায় তিন স্পিনার নাঈম, খুশদিল শাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ওপর। খুশদিলের ১২ বল থেকে ২ চার ও ১ ছয়ে নেন ২০ রান। নাঈমকে মারেন ৩ চার ও ১ ছক্কা। ইনিংসের ১৮তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকে পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়ান তিনি।
সাকিবকে আটকানোর কাজটা কুমিল্লার জন্য আরও কঠিন হয়ে যায় মুস্তাফিজুর রহমানের চোটে। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে গিয়ে পাঁচ বল করার পর হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগে তার। পরে রানআপ ছোট করে শেষ বলটি করে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। ফলে বাকি সময় হাসান আলি ছাড়া আর কোনো পেসারকে পায়নি কুমিল্লা। সাকিবের উত্তাল ব্যাটিংয়ের মাঝেও ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম।
রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরু করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। সাকিবের প্রথম ওভারে দেখেশুনে খেলার পর চতুরাঙ্গার বাঁহাতি স্পিনে চার মারেন লিটন, রিজওয়ান ওড়ান ছক্কায়। পরের ওভারে সাকিবের বলে ছক্কা মারেন লিটনও। সানজামুল ইসলাম আক্রমণে এলে তাকেও ছক্কায় স্বাগত জানান লিটন। চতুরাঙ্গার পরের ওভারে রিজওয়ান মারেন নিজের দ্বিতীয় ছক্কা। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি ম্যাচ শুরুর ৪০ মিনিট আগে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসা পাকিস্তানি ওপেনার।
পাঁচ ওভার স্পিনার দিয়ে করানোর পর পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে কামরুল ইসলামের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। তৃতীয় বলে মেলে সাফল্য। কামরুলের লেগ স্টাম্পের ওপর করা স্লোয়ার ডেলিভারি অন সাইডে খেলতে গিয়ে ওপরের কানায় লেগে কট বিহাইন্ড হন রিজওয়ান। ২ ছয়ে ১১ বলে তিনি করেন ১৮ রান। পরের ওভারে রানআউটে থামে লিটনের ১ চার ও ৩ ছক্কায় খেলা ৩২ রানের ইনিংস। ফাইন লেগ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে কুমিল্লার ওপেনারকে ফেরান করিম জানাত।
অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ঝড়ো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২৮ রান করে ফেরেন তিনি। চতুরাঙ্গার বলে স্লগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন ইমরুল। এরপর হতাশ করেন ক্যারিবিয়ান তারকা চ্যাডউইক ওয়াল্টন (১৬ বলে ১৪)। জাকের টিভি আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হলে ১০০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে কুমিল্লা।
ষষ্ঠ উইকেটে চেষ্টা করেন খুশদিল ও মোসাদ্দেক। দুজন মিলে ৫.২ ওভারে যোগ করেন ৫৪ রান। ১৯তম ওভারে মোসাদ্দেক আউট হয়ে যান ১৯ বলে ২৭ রান করে। তখনও জয়ের জন্য বাকি ছিল ৮ বলে ২৪ রান। কঠিন এই সমীকরণ মেলানো সম্ভব হয়নি খুশদিলের। ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ