সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে ১১ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন ৬ গ্রাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
সাবমেরিন কেবল ছিঁড়ে ১১ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার তীরবর্তী ছয়টি গ্রামের মানুষ। এতে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বন্ধ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়নে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

 

 

 

 

জানা যায়, সদর উপজেলার ইসলামপুরের চাটাইডুবী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে। এর আওতায় মীরেরচর থেকে বাতাশ মোড় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং বাতাশ মোড় থেকে নিশিপাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় পৌনে ১৪ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল স্থাপন করা হয়। ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পদ্মার চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এটি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। দুই উপজেলার ৪ হাজার ২০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধায় আসে। প্রায় দেড় বছরের মাথায় ৪০ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের ৩টি ফেজের মধ্যে একটি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার কেবলের দুই দফায় তিনটি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ১১ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুটি ইউনিয়ন।

সূত্রটি জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি টাকা ব্যয় হয় নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পদ্মা নদীর তলদেশে বসানো সাবমেরিনের সবকটি কেবল ছিঁড়ে যায়। ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর, দক্ষিণ পাকা, নিশিপাড়া চর ও কদমতলা এবং উজিরপুর ইউনিয়নের সেতারাপাড়া।

 

 

 

 

 

এ ছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুরে বিদ্যুৎসেবা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২ হাজার ২০০ গ্রাহক জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। বাড়তি খরচে জ্বালানি তেলে সেচ দিতে হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল ফোনের চার্জ, নেটওয়ার্ক সেবার পাশাপাশি সরিষা, ধান ও গম ভাঙানো মেশিনও বন্ধ রয়েছে।

এসএম জুয়েল নামে দক্ষিণ পাঁকার এক বাসিন্দা জানান, গত ১১ দিন ধরে বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছে না তার গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বিষয়টি জানালেও তারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কয়েকশ পরিবার কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে। তারা সবাই সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে বিদ্যুৎসেবার আওতায় ছিল।

সদর উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, ১০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে তাদের গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাদের আশপাশের কোথাও বিদ্যুৎ নেই। এতে তাদের কষ্টের সীমা নেই। সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে প্রায় ৩০০ পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। নদীর তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপনে সমস্যার কথা জানানোর পরও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসায় এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। বিদ্যুৎ ছাড়া তাদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যায়। এ মাসের শুরুর দিক থেকেই সাবমেরিন ক্যাবলের দুটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন। লোডশেডিংয়ের সময় চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল। তবু এলাকায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ এলেও মোবাইল ফোনে চার্জসহ অন্য কাজ করা হয়ে যেত। কিন্তু গত ১১ দিন ধরে চরাঞ্চলে কোনো বিদ্যুৎ নেই। এলাকার মানুষ পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে সাবমেরিন কেবলের তার ছিঁড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। প্রায় ৭০ কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পটি সচল রাখতে কারিগরি সহায়তাকারী দল কাজ শুরু করেছে। তবে নদীর পানি বেশী থাকায় সাবমেরিন কেবলটি মেরামতে সময় লাগবে।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine