রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর

 রাবি প্রতিনিধিঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলের বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মো. শাহরিয়ার (২৩) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

নিহত শাহরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। তিনি হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

 

হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওইদিন রাত আটটার দিকে হলের তৃতীয় ব্লকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়। শব্দ শুনে কয়েকজন এসে দেখেন হল মসজিদের সামনে শান বাধানো টিউবওয়েলের পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন শাহরিয়ার। তখন কয়েকজন মিলে দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তবে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় কীভাবে পড়ে গেছে তা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি।

 

ঘটনাস্থলে থেকে শাহরিয়ারকে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের একজন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেখি টিউবওয়েলের শানের ওপর একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন তার কোন জ্ঞান ছিল না। সেখানে তার প্রচুর রক্ত বের হয়েছিল। পরে আরো কয়েকজনসহ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

 

হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ

শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে নানা প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর ভর্তি করা হয়। এতে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার কথা বললে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাদের ওপর চড়াও হন। এমন অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ঘটনার সাথে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তি দাবি জানান তারা।

 

এ ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ নাথ, নাজমুল হোসেন, আব্দুল আহাদ, রাকিব হাসান ও মে. রকিব এবং তৃতীয় বর্ষের ওয়াকিফ ও লিমন নামে ও মাস্টার্সের আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থী আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান।

 

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা তারেক নূর, মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার শিক্ষার্থীদের আশ্বস্থ করে বক্তব্য রাখেন।

তদন্ত কমিটি গঠন

শাহরিয়ারের মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলা ছিল কিনা, শিক্ষার্থীদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলা এবং হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। বুধবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মহানগর পুলিশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা তারেক নূর, হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক ও একজন পুলিশ উপ-কমিশনার। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

চোখের পানিতে সহপাঠীদের শেষ বিদায়

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্ত্বরে নিহত শাহরিয়ারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়িতে মরদেহ গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরলের উদ্দেশে রওনা হয়। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহরিয়ারের সহপাঠীরা। শাহরিয়ারের এভাবে বিদায় নেওয়াকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তারা।

শাহরিয়ারের বন্ধু মিজানুর রহমান বলেন, ‘শাহরিয়ারকে আমরা এভাবে হারাবো কখনোই আমরা ভাবতে পারিনি। শাহরিয়ার নরম হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। সবার সাথেই ওর ভালো বন্ধুত্ব ছিল। শাহরিয়ার সদালাপী ছিলেন। এমন ভালো বন্ধু বিয়োগের বেদনা বর্ণনীয় নয়।’

 

জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মানুষের মৃত্যু অবধারিত। তবে এভাবে আমার ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষক হিসেবে তা কখনোই চাই না। ওর আচরণে কেউ কষ্ট পেলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

 

ভাইয়ের লাশ নিতে এসে নিহত শাহরিয়ারের বড় ভাই গোলাম শাহরিয়ার সাকি বলেন, আমার স্নেহের ভাইয়ের কফিনের যে ওজন তা নিতে পারবো কিনা জানি না। তাকে সবাই ক্ষমা করে দিয়েন। তার সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা তাকে এভাবে ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদানের জন্য। আমার ভাই এবং আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমরা শোক কাটিয়ে উঠতে পারি।

 

জানাজায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, প্রক্টর আসাবুল হক, রেজিস্ট্রার আবদুস সালামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২২ | সময়: ৯:৩৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine