সর্বশেষ সংবাদ :

আমি বিসিএস ক্যাডার নই যে অন্য চাকরি করব’

স্পোর্টস ডেস্ক: ‘খারাপ তো অবশ্যই লাগছে। মাঠের খেলোয়াড়, কিন্তু মাঠে আসতে পারছি না’- ছোট্ট হাসিতে বললেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। পিঠের চোটে প্রায় তিন মাস ধরে মাঠের বাইরে তিনি। স্বাভাবিকভাবেই তার মনে বিষাদের ছায়া। তবে লড়াইয়ে হাল ছাড়ছেন না তিনি। নতুন করে মাঠে ফেরার লড়াইয়ের নামার আগে পেস অলরাউন্ডার বললেন, ক্রিকেটের জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো থেকেই চোট নামক অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর সঙ্গে সাইফের সখ্য। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে বারবার আততায়ী হয়ে তাকে আঘাত করেছে চোট। বিশেষ করে, পিঠের চোট যেন তার পিছুই ছাড়ছে না। সবশেষ গত মে মাসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে বোলিংয়ের সময় পাওয়া চোটে ছিটকে গেছেন।
প্রায় তিন মাস কেটে যাওয়ার পর নতুন করে শুরু হচ্ছে তার মাঠে ফেরার লড়াই। যার শুরুতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সান্নিধ্য। বিসিবির তত্ত্বাবধানে আরও দুই তরুণ পেসার অভিষেক দাস ও আশিকুর জামানের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় কাতার যাচ্ছেন ২৬ বছর বয়সী পেস অলরাউন্ডার। তাদের সঙ্গে থাকবেন বিসিবির চিকিৎসক মঞ্জুর হোসেন চৌধুরি।
ছয় বছরের বেশি সময়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে অন্তত তিনবার চোটের কারণে তিনি ছিটকে পড়েছেন দল থেকে। বারবার ফিরে আসা পিঠের চোটে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত খেলা হয়নি তার। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে তিনি মাঠে ফেরেন।
পরে গত বছরের এশিয়া কাপ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরেন সাইফ। কিন্তু পারফরম্যান্সের কারণে আবার বাদ পড়ে যান বিশ্বকাপের দল থেকে। এরপর শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন পেস অলরাউন্ডার। কিন্তু চোটের কারণে আবার দেখা দেয় লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা। সব মিলিয়ে চোটের সঙ্গে লড়াই যেন সাইফের জন্য রুটিনে পরিণত হয়েছে। এবার নতুন লড়াই শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমে বললেন, ফিরে আসার অভিযানে হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি।
“এটা (ক্রিকেট) আমার পেশা। সত্যি বলতে, আমি বিসিএস ক্যাডার নই যে অন্য কোনো চাকরি করব (হাসি)। যত দিনই খেলতে হবে, লড়াই করে খেলতে হবে। এটা আমার রুটি-রুজি। ক্রিকেট আমার সব কিছু। এটার জন্য যতটুকু করা দরকার, সব সময় করে এসেছি এবং সবসময় করব।” দোহার স্পোর্টস মেডিসিনের জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে হবে সাইফসহ তিন ক্রিকেটারের চিকিৎসা। রোববারই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাদের। তিন পেসারের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর ওই চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী এগোবে পরবর্তী চিকিৎসা।
তবে মাঠে ফিরতে কত দিন লাগবে, সেটি এখনই জানার সুযোগ নেই। মাঠে ফিরলেও ভারত বিশ্বকাপে সাইফের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অথচ ইংল্যান্ডে গত বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথিদের একজন। সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের দীর্ঘদিনের ঘাটতি পূরণে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় ভরসা। কিন্তু সব মুছে গেছে সময়ের স্রোতে।
চার বছর পর এবার মাঠের বাইরে বসে আরেকটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি দেখতে হবে ভেবেই যেন মাঠে ফেরার আকুতি আরও জোরাল হয়েছে সাইফের। “অবশ্যই (বিশ্বকাপ অনিশ্চিত হওয়ায়) খারাপ কেন লাগবে না! সব সতীর্থ, বন্ধুবান্ধব, ছোট ভাই সবাই ক্যাম্প করছে, ফিটনেস টেস্ট দিচ্ছে, মিডিয়ায় এগুলো দেখছি। খারাপ অবশ্যই লাগে। মাঠের খেলোয়াড়, কিন্তু মাঠে আসতে পারছি না। এখানে এলে ওদের সঙ্গে গল্প, আড্ডা- এসব করে সময়টা পার করি। যখন সুস্থ হব, তখন আবার ওদের একটা অংশ হব।”
চোটে বাদ পড়ার পর আগে বেশ কয়েকবারই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় দলে ফিরেছেন সাইফ। তবে গত কয়েক বছরে পেস বোলিং ইউনিটের নব জাগরণে এখন তিনি ফিট হয়ে উঠলেও দলে জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন। সাইফ অবশ্য সেটি নিয়ে ভাবতে চান না। আপাতত মাঠে ফেরার লড়াইয়ে তার মনোযোগ।
“মাঠে ফিরে আমি শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব আবার আগের ছন্দে ফেরার। পরে জাতীয় দলে ফিরব কী ফিরব না, সেটা হয়তো নির্বাচক বা যারা কোচ আছেন, তাদের ওপর নির্ভর করবে যে, আমাকে নেবেন কি না। যদিও এখন কোনো খেলা নেই। দেখা যাকৃ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরি। পুরো দমে অনুশীলন করি। বাকিটা আল্লাহর হাতে।”
সাইফের মতোই অভিষেকের চোটও পিঠে। আশিকুর ভুগছেন কুচকির সমস্যায়। গত বিপিএলের পর কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি সাতক্ষীরার এই তরুণ পেসার। আর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অভিষেক ২০২০ সালের প্রিমিয়ার লিগের পর থেকেই বোলিং করতে পারছেন না। প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। সাইফের মতো এই দুজনের সামনেও এখন ফেরার লড়াই।


প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ