তাহের কন্যার সাড়ে ১৭ বছর আইনি লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার : রাবির অধ্যাপক ড. তাহের আহমদের মেয়ের ইচ্ছে ছিলো আইন বিষয়ে শিক্ষক হবেন। কিন্তু কে জানত পিতার হত্যার বিচারের জন্য জীবনটাকেই উৎসর্গ করে দিতে হবে! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-ত্বত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের যখন হত্যার শিকার হন তখন তাঁর মেয়ে সাগুফতা তাবাস্সুম আহমেদ ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছিলেন। এরই মধ্যে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। পিতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে তিনি টানা সাড়ে ১৭ বছর ধরে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন। মামলা দ্রুত শেষ করতে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য সরবরাহ করেছেন। অবশেষে সর্বোচ্চ আদালত থেকে খুনিদের শাস্তির রায় নিশ্চিত করে ঘরে ফিরেছেন ড. তাহেরের লড়াকু মেয়ে সাগুফতা তাবাস্সুম আহমেদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোবাইলে দৈনিক জনকন্ঠের এই প্রতিবেদককে সাগুফতা বলেন, ‘বাবা আমাকে আইন বিষয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। ইচ্ছে ছিল আইনের শিক্ষক হবো। কিন্তু বাবা খুনের পর জীবনের লক্ষ্য পাল্টে যায়। তখন সিদ্ধান্ত নিই আমি প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার হবো। আইনজীবী হয়ে বাবার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করব।’
সেগুফতা বলেন (আজও মঙ্গলবার) এ মামলার একটি শুনানী ছিলো। এ সংক্রান্ত আসামী জাহাঙ্গীরের পক্ষের রিটটি খারিজ হয়ে গেছে। এদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ হত্যাকান্ডকে একাত্তরের বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকান্ডটি ছিলো পরিকলিপত ও নৃসংশ। তিনি বলেন, এ মামলাটি লড়াই করেছেন তিনি শুরু একা নয়, তার পরিবারের সবাই বিচার নিশ্চিতের জন্য লড়াই্ করেছেন।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এখন ফাসি কার্যকরের খবরে তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার শুরু থেকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। ফাঁসি কার্যকরে মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো যে, অপরাধিরা পার পায় না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর আদালতে ২০০৮ সালে যখন এ হত্যা মামলার রায় হয় তখনো আমি আইনের ছাত্রী। তবে ২০১৩ সালে যখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের রায় হয় তখন আমি আইনজীবী।’
এই দীর্ঘ লড়াইয়ে তাঁকে অনেক ঝামেলা ও পরিশ্রমের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি। শেষ দেখেই নিয়েছেন তিনি। সাগুফতা আরও বলেন, ‘বিচারিক আদালতে রায় হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালতে রায় হওয়া পর্যন্ত আমি এবং আমার পরিবার এ মামলার বিচারে ছায়ার মতো লেগে ছিলাম। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। উচ্চ আদালতে মামলা দ্রুত শেষ করতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কত যে দৌড়াদৌড়ি করেছি তার হিসাব নেই।’ তিনি বলেন, শুরু থেকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আইন যে তার নিজস্ব গতিতে চলে অপরাধীদের ফাসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। ফাসি কার্যকরের পর তিনি ও তার পরিবার শস্তি পেয়েছেন বলে জানান ড. তাহের আহমদের আইনজীবী কন্যা সাগুফতা তাবাস্সুম।


প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ