বরেন্দ্রে আরবের খেজুর

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর: বরেন্দ্রের মরুভুমিতে সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে যে স্বপ্ন বুনেছিলেন ওবাইদুর ইসলাম রুবেল নামের এক চাষী তার স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিতে শুরু করেছে। তার খেজুর বাগানের গাছে গাছে সোভা পাচ্ছে খেজুর। আর কাঁচা নয় এবার বরেন্দ্রে পোড়া মাটিতেই রঙ লেগেছে আরবের খেজুরে। গাছ গাছে পাঁকা সুস্বাদু মিষ্টি খেজুর যেন এবার নজর কাড়ছে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীসহ একাবাসীর।
এমন নজর কাড়া খেজুর বাগান করে বেশ আলোচিত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের পোড়া মাটি হিসাবে পরিচিত নাচোল উপজেলা ভেরেন্ডি এলাকার মোকশেদ আলী ও তার ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেল।
বাগানের মালিক রুবেল জানান, সৌদি আরবের খেজুর গাছ লাগানো ২০১৭ সালে প্রথম শুরু করেন তার ৯০ শতক জমিতে। তিন বছরের মাথাই অল্প পরিসরে খেজুর ধরলেও চলতি বছর তার বাগানের প্রায় ৫০০ অধিক গাছের মধ্যে একশ বেশি গাছে খেজুর ধরেছে। বর্তমানে সবগুলো খেজুরে পাকা রঙ ধরেছে। মানভেদে ৫ কেজি হতে ৬০ কেজি পর্যন্ত খেজুর পাওয়া যাবে একেকটি গাছ থেকে।
রুবেল জানান, সুস্বাদু মিষ্টি এ খেজুর অনেক দুর-দুরান্ত থেকে বাগানে গাছ পাঁকা খেজুর নিতে ক্রেতারা আসছে। চলতি বছর গাছে যে পরিমাণ খেজুর আছে, বিক্রি করতে পারলে প্রায় ১০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাদের বাগানে মরিয়ম, আজোয়া, ক্ষীর, সুলতান, খালাস সহ এগারো জাতের খেজুর রয়েছে। সৌদিয়ার সব চেয়ে দামী খেজুর আজোয়া সেটাও তার বাগানে আছে। মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি।
সরেজমিন শনিবার দুপুরে নাচোলে খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যাই গাছে গাছে খেজুর পাক ধরেছে। বৃষ্টি পানি থেকে রক্ষায় খেজুরে থোকায় থোকায় সাদা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। সে সময় বাগানে দুর দুরান্ত থেকে কয়েকজন খুরচা ক্রেতা এসেছিলেন খেজুর কেনতে।
এরমধ্যে রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর এলাকার প্রকাশনগর গ্রামের সামসুজোহা নামের এক খেজুর ক্রেতা এসেছিলেন। বাগানে কথা হয় ক্রেতা সামসুজোহার সাথে। তিনি জানান, সৌদি আরবের খেজুর আমাদের দেশের মাটিতে পাওয়া যাচ্ছে এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। গাছে থেকে পাকা খেজুর নিতে তিনি মুন্ডুমালা পৌর এলাকা হতে এসেছেন। সাড়ে সাতশ টাকা দরে দুই কেজি গাছে পাকা খেজুর নিয়েছেন। খুব সুন্দর মিষ্টি এবং স্বাদে ভরা।
গাছের মালিক রুবেল জানান, যারা দুর দুরান্ত হতে বাগান দেখতে বা খেজুর কিনতে আসেন তাদের সবাইকে খেজুর খেতে দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকানে তিনি।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মরুভুমির সুস্বাদু ফল খেজুর চাষ করে স্বপ্ন বুনেছেন বৃদ্ধ মোকশেদ আলী ও তার ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেল। তাদের বাবা ছেলের সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ হয়নি। লোক মুখে আর টেলিভিশনে সৌদিয়ান খেজুর চাষের কথা শুনে ইচ্ছে জাগে বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষ করবেন।
দু’বছর পুর্বে বপনের পর তাদের সাধনা বাস্তবায়িত হয়। বরেন্দ্র ভূমির নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডি এলাকায় ৯০ শতাংশ জমিতে ’১৭ সালের শেষ দিকে গড়ে তোলেন সৌদিয়ান খেজুরের বাগান।
বছর দুয়েক পুর্বে সৌদিয়ান খেজুর বাগান করার জন্য মোকশেদ আলী আফগানস্থান প্রবাসী প্রকৌশলী এক আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি সৌদি আরব থেকে নাচোলে খেজুরের বীজ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মোকসেদ আলী ও তার একমাত্র ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেলকে নিয়ে গড়ে তোলেন সৌদিয়ান খেজুরের বাগান ও নার্সারী।


প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৩ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ