বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা, রাবিতে আর্ট গ্যালারি স্থাপনের দাবি

রাবি প্রতিনিধি: ‘শিল্প হোক উন্নত মননের সোপান’ এই প্রতিপাদ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের তৃতীয় ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০২৩’ গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। প্রদর্শনীর জন্য চারুকলা অনুষদের নিজস্ব গ্যালারি না থাকায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন একাডেমিক ভবনে অবস্থিত এই বিভাগটির চারটি শ্রেনীকক্ষেই চলে সাত দিনব্যাপী আয়োজিত এই প্রদর্শনী।
গ্যালারিতে প্রদর্শিত না হওয়া সত্বেও প্রদর্শনীটির শিল্পকর্মগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শনার্থীরা। শিল্পকর্মগুলোর মান নিয়ে যেমন ব্যাপক সুনাম করেছেন তারা তেমনি এসকল প্রদর্শনীগুলো আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য চারুকলা প্রাঙ্গণে গ্যালারি স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
চারুকলায় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী হচ্ছে বন্ধুদের কাছে শুনেই সেটি দেখতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, চারুকলায় যতবারই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী হয়েছে, ততবারই আমি দেখতে এসেছি। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের প্রদর্শনীটা বেশ বৃহৎ পরিসরে হচ্ছে। প্রত্যেকবার রাবি চারুকলা যে স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখে এবারও সেটি বজায় রাখা হয়েছে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত চারুকলা অনুষদে আর্ট গ্যালারি স্থাপনে উদ্যোগ নেননি, এটি আসলে খুব শুভ কোনো ব্যাপার না। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি মননশীলতা চর্চার জায়গা, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাইব চারুকলায় একটি আর্ট গ্যালারি স্থাপন করা হোক।
চারুকলা থেকে পড়াশোনা শেষ করে গত ৬বছর আগে বেরিয়ে গেছেন অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এসএম মাহফুজুর রহমান শিমুল। বিভাগের প্রদর্শনীর খবর শুনেই তিনি চারুকলায় এসেছেন প্রদর্শনী দেখতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের প্রদর্শনীর লাইটিং সিস্টেম, ডেকোরেশন সিস্টেম সবই আগের চেয়ে উন্নত। সেদিক থেকে শিল্পকর্মগুলো উপভোগ করার সুযোগ-সুবিধাটা ভালো হয়েছে আমাদের। যদিও এখানে গ্যালারির মতো আধুনিক লাইটিং সিস্টেমটা নেই, ফলে সন্ধ্যায় খুব ভালোভাবে শিল্পকর্মগুলো উপভোগ করা সম্ভব নয়। আর দিনের বেলায় অনেকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। যদি একটি গ্যালারি থাকত, তাহলে দর্শনার্থীরা রাতেও এসে এই প্রদর্শনীটি উপভোগ করতে পারতেন।
নগরীর শালবাগান এলাকা থেকে প্রদর্শনী উপভোগ করতে এসেছেন জ্যোৎস্নারা খাতুন। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রদর্শনীতে আমার সন্তানও অংশগ্রহণ করেছে। তাদের এই দীর্ঘদিনের কষ্টসাধ্য কাজগুলো যখন একত্রে প্রদর্শিত হয়, তখন বিষয়টি দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। সেটিই উপভোগ করতে আমি প্রদর্শনীতে এসেছি। প্রদর্শনীর কাজগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।
জানতে চাইলে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি ও ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০২৩’র আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সোবাহান বলেন, দর্শনার্থীদের ভালোলাগাই আমাদের শিল্পী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তি। আমাদের নিজস্ব গ্যালারি থাকলে হয়ত দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীটি আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারত। আর গ্যালারি থাকলে প্রায় সময়ই এসকল প্রদর্শনীর আয়োজন করা সম্ভব। কিন্ত গ্যালারি না থাকায় শ্রেণীকক্ষেই আমাদের প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হচ্ছে। যেটা অনেক কষ্টসাধ্য এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাবির চারুকলা অনুষদে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় এই শিল্পীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্ইু মাসের মধ্যে আর্ট গ্যালারি স্থাপনের আশ্বাস দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এইএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
গ্যালারি স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা অনুষদের শিক্ষকরা ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে গ্যালারির জন্য স্থান নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। প্রস্তাবনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহিত হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাসিক মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে শীঘ্রই চারুকলা চত্ত্বরে গ্যালারি স্থাপন করা হবে।


প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ