সর্বশেষ সংবাদ :

ইসতিসকার নামাজে কাঁদলেন হাজারও মানুষ

মফস্বল ডেস্ক: বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে মাটি, পুড়ছে শস্যের মাঠ। বাতাস ছড়াচ্ছে আগুনের হল্কা। অতিষ্ঠ জনজীবন। কৃষক যখন মাঠে কাজ করবে, ঠিক তখন প্রকৃতির এই বিপর্যয় সবাইকে ঘরবন্দি করে রাখছে। কখন বৃষ্টি ঝরবে এ প্রত্যাশা এখন সবার। অনেকে মাঠে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নাটোরের বড়াইগ্রাম, নওগাঁর সাপাহার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর পুঠিয়া, বগুড়ার আদমদীঘি ইসতিসকার নামাজ পড়ে বৃষ্টির প্রার্থনা করা হয়েছে। সানশাইন প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহের কারণে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে নাটোরের বড়াইগ্রামে পৃথক পৃথক তিন স্থানে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা চেয়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছে মুসল্লিরা। নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতে দুহাত তুলে অঝোরে কেঁদেছেন শত শত মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইসতিসকার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা সাইফুল ইসলাম। একই সময়ে বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে ইমামতি করেন অধ্যক্ষ মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসেন। এখানে বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন নামাজে অংশ নেন। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় ও ধানাইদহ ফাজিল মাদরাসা মাঠে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মুসল্লিরা ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন।
বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত নামাজে অংশ নেয়া বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক শফীউল হাসান তীতু বলেন, প্রচন্ড তাপদাহে মানুষসহ সব ধরণের প্রাণিরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা খোলা মাঠে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চেয়েছি এবং বৃষ্টি চেয়েছি।
সাপাহার প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারা দেশ। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে সাপাহার সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে বৃষ্টি জন্য ইসতিসকার নামাজের এক বিশেষ আয়োজন করেছেন সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সাপাহার সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে এই ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ইসতিসকার নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে বিশেষ দোয়া প্রার্থনার করে অঝরে চোখের জল ছেড়ে মোনাজাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন ইমাম ও এলাকার মুসল্লিরা। নামাজে ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন উক্ত মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা ওমর ফারুক।
বিশেষ এই নামাজে আসা সাধারণ সুসুল্লিরা জানান, কালবৈশাখীর এই মৌসুমে বৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বরং টানা তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে আমের গুটি। রোদের তীব্রতায় শ্রমজীবী মানুষ বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির আশায় উপজেলাবাসী বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন।
ইসতিসকার নামাজ আদায় করতে আসা কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, অনেক দিন বৃষ্টি নেই, তীব্র রোদ ও প্রচণ্ড গরম হচ্ছে। তাছাড়া ঘনঘন লোডশেডিং সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তাই মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য নামাজ ও দোয়া করতে এসেছি।
অন্যান্য মুসুল্লিরা বলেন, দীর্ঘ সময় বৃষ্টিপাত না হলে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করতেন। সে জন্য তারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের পাপের জন্য তওবা এবং ক্ষমা চেয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে জমায়েত হয়েছেন। অনেক অঝোর কেঁদেছেন বলেছেন আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করে রহমতের বৃষ্টি দিয়ে আমাদের রক্ষা করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: সারা দেশের মতো অনাবৃষ্টি ও দাপদাহে পুড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ফলে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়েছে জেলাজুড়ে। বৃষ্টির পানির অভাবে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির অবস্থায় মাঠের ফসল বিনষ্ট হয়ে পড়েছে, আমের গুটি ঝড়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানি চেয়ে মহান আল্লাহ দরবারে সাহায্য চেয়ে ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মুনাজাত করে সহস্রাধিক মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে শিবগঞ্জে পৃথক এলাকায় ইস্তেসকার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে গরম থেকে মুক্তি, ফসল রক্ষা ও বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহপাকের রহমত কামনা করে দোয়া করা হয়। এতে হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকসহ এলাকার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ইস্তেসকার দুই রাকাত নামাজ আদায় শেষে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের নিয়ে সৃষ্টিকর্তার দরবারে দুই হাত তুলে মোনাজাত পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে পৃথিবীর সকল মুসলমান জন্য দোয়াও করেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন কাউন্সিল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পিরোজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, দুলর্ভপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আম বাজার এলাকায় বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ অন্ষু্িঠত হয়।
গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে অনাবৃষ্টি ও দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে মহান সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন বিভিন্ন বয়সের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজ মাঠে কয়েকশ মুসল্লি সমবেত হয়ে এ বিশেষ নামাজে অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন নাচোল ঝলঝলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমিন।
পুঠিয়া প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বৃষ্টির প্রার্থনা করে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থানীয়রা এই নামাজের আয়োজন করেন।
এই বৃষ্টির নামাজে ইমামতি পরিচালনা করেন বানেশ্বর কেন্দ্রীয় জামে মজজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুল আলিম যুক্তিবাদী। এসময় নামাজ শেষে র্দীঘ মোনাজাতে মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে বৃষ্টি জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরাসহ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আদমদীঘি প্রতিনিধি: তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির আশায় বগুড়ার আদমদীঘিতে ইসতিসকা নামাজ আদায় করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের ঈদগাহ মাঠে সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার এ নামাজ আদায় করেন তাঁরা। এ ইসতিসকা নামাজের ইমামতি করেন নসরতপুর বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম মোস্তফা। এসময় দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে প্রচণ্ড গরম, তীব্র তাবপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর কাছে তারা মোনাজাত করেন। নামাজে অংশগ্রহণ করেন ধনতলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোফাজ্জল হক, ধনতলা মাদ্রাসার মাওলানা হাফেজিয়া মাদ্রাসার হাফেজ মাওলানা ইউনুস আলী, পূর্ব মুরইলের জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নিজাম উদ্দিনসহ স্থানীয় দুই শতাধিক মুসল্লিরা।
নলডাঙ্গা: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার নলডাঙ্গা সোনাপাতিল মহিলা কলেজ মাঠে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ শে এপ্রিল -২০২৪) সকাল সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত ইসতিসকার নামাজের ঈমামতি করেন, হাফেজ মাওলানা আমিনুল ইসলাম।
উক্ত নামাজ শেষে খুতবা প্রদান করেন, নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর জিয়াউল হক জিয়া। খুতবা শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন, নলডাঙ্গা কেন্দ্রীয় মসজিদের সাবেক পেশ ঈমাম, ডাক্তার মাওলানা ফজলুর রহমান ফজল হুজুর।
ইসতিসকার নামাজে অংশ গ্রহণ করেন, মাওলানা আব্দুর রউফ, আব্দুর রাজ্জাক, মামুনুর রশীদ, আশরাফুল ইসলাম, জিহাদুল ইসলাম জিহাদ, শমসের আলী, মাওলানা আবু নওশাদ নোমানি,নলডাঙ্গা কেন্দ্রীয় মসজিদের ঈমাম হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম সহ শত শত মুসল্লিগণ।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ