রাজশাহীতে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। রবিবার রাজশাহী মহানগরীর পাশাপাশি উপজেলাগুলোর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড করা হয় এবং লাইসেন্স পর্যালোচনা করা হয়। একই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স সংগ্রহ করার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা মেনে বৈধ ভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
রবিবার দুপুরে রাজশাহীর দুইটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান আদালত। মেয়াদউত্তীর্ণ রিএজেন্ট ও সেবার নির্ধরিত মূল্যের চাইতে অধিক মূল্য আদায়ের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুইটির কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের সহকারী পরিচালক মো: হাসান-আল-মারুফ জানান, ঘোষ পাড়া মোড় এলাকায় অবস্থিত মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহার করার অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অপরদিকে সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত লাইফ সাইন ল্যাব অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টারকে ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে সেবা বিক্রয় ও মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহারের অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে সহায়তা করেছেন জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়ের প্রতিনিধি ডাঃ আব্দুর রাকিব ও জেলা স্যানিটারি ইনস্পেকটর মোঃ শহিদুল ইসলাম সহ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে সুপারভিশন ও মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় অনিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে অনুমোদন না থাকায় দুটি ক্লিনিক সীলগালা করা হয়। এছাড়া নিয়ম ভেঙ্গে এক্সরে করায় অপর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুর্গাপুর সদর ও আলীপুর বাজারে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: এএসএম আব্দুল্লাহ বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে হলি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আলীপুর বাজারে অবস্থিত কেয়ার ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধনের যথাযথ কাগজপত্র না পাওয়ায় সেগুলোকে তাৎক্ষণিক বন্ধ ঘোষণা করা সহ সীলগালা করা হয়েছে।
এছাড়া দীনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহার এবং অনুমোদন ব্যতীত এক্সরে করা, বিধি বহির্ভুত ভাবে ফ্যাকচারের রোগীদের প্লাস্টার সহ ভূল চিকিৎসা করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ভবিষ্যতে এই কাজ থেকে বিরত থাকবে মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। অপরদিকে তৌফিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেছে। তারা ১০ বেডের অনুমতি নিয়ে ১২ বেডের হাসপাতাল পরিচালনা করায় মৌখিক ভাবে সর্তক করা হয়েছে ও দুটি বেড কমিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুভ দেবনাথ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেহেদী হাসান ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইমরান হোসেন মালিথা।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে সুপারভিশন ও মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় রাজশাহীর পবা উপজেলায় অভিযান চালানো হয়েছে। শনিবার উপজেলার নওহাটা, কাটাখালি ও দারুশা বাজারে ৮টি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ অভিযান চালানো হয়। দারুশায় অভিযানের সময় সদ্য আবেদন করা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা প্রদানকরা হয় এবং বাকীগুলোতে অনুমোদনপত্র রিভিউ (হালনাগাদ) করতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। অভিযানে অংশ নেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরীসহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধিবৃন্দ। গোমস্তাপুরে ২৭ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মধ্যে ৩টি সিলগালা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার বিকেলে এ অভিযান চালনো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন। প্রতিষ্ঠান চালানোর বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দু’টি ডায়গনিক সেন্টার ও একটি ক্লিনিককে সিলগালা করা হয় ।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সারা দেশে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গোমস্তাপুর উপজেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালান ভ্রাম্যমান আদালত। উপজেলার সদর রহনপুরস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রহনপুর ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও রাজ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। ওইসময় প্রতিষ্ঠান দু’টিকে সিলগালা করা হয়। এছাড়া রহনপুর বড় বাজারে অবস্থিত ইসলামীয়া নার্সিং হোমে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র দিয়ে ক্লিনিক চালাতেন। তবে ক্লিনিক চালানোর কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি প্রতিষ্ঠানটি। এ অভিযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বাদে ক্লিনিক সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন।
গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হামিদ বলেন,গোমস্তাপুর উপজেলায় ১০ক্লিনিক ও ১৭ ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে শনিবার বিকেলে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক। তবে এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানান।


প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২২ | সময়: ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ