নওগাঁর টুপির কদর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ॥ মজুরী বৈষ্যমে কারিগররা 

নওগাঁ  প্রতিনিধি:
নওগাঁর নারীদের হাতে তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সুঁই-সুতা দিয়ে তৈরী চমৎকার এসব টুপি হচ্ছে ওমানের জাতীয় টুপি। সারা বছর এই টুপি তৈরি হলেও রমযানের ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায় টুপি তৈরির পল্লীগুলোতে। শুধু গৃহিণারাই নয় বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরাও অবসর সময়ে এই টুপি তৈরি করে বাড়তি অর্থ আয় করছে। তবে প্রতিটি টুপি তৈরির মজুরী খুবই নগন্য। তবুও সংসারের কাজের ফাঁকে এই টুপি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন মহিলারা। টুপির মান আরো উন্নত করতে সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণের দাবী সংশ্লিষ্টদের।

 

রপ্তানীকারক মো. সুজন হোসেন বলেন, প্রথমে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, মধুবন, উত্তরগ্রাম, কুঞ্জবন গ্রামের মহিলা দ্বারা কাজ করে টুপি তৈরী করে রপ্তানী করতাম। বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলায় নারীদের হাতের নিপুন ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দামী হরেক রকম ডিজাইনের এই টুপিগুলো। বিশেষ করে নওগাঁ সদর, নিয়ামতপুর, সাপাহারসহ উপজেলার প্রায় কয়েক শতাধিক গ্রামে এই টুপি তৈরী করা হয়।

 

প্রথমে এই টুপিগুলো রপ্তানীকারকদের মাধ্যমে ওমানে যায় এরপর সেখান থেকে যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে এই টুপিগুলো তৈরি করে নেয়। এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০/১০০ টি টুপি তৈরী হয়। টুপি তৈরির সকল উপকরণ আমি সরবরাহ করে থাকি। প্রকার ভেদে প্রতিটি টুপি তৈরি করতে কারো সময় লাগে এক মাস আবার কারো সময় লাগে দুই মাস। প্রকার ভেদে বিভিন্ন টুপির মজুরী বিভিন্ন। ২০০ থেকে ২৫০০টাকা পর্যন্ত টুপির মজুরী প্রদান করা হয়। তাই টুপির তৈরির কারিগরদের সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এই শিল্পটির আরো বিস্তার করা যেত ।

 

সুপারভাইজার মোর্শেদ বলেন টুপি সুতা বেল্ট পৌছে দিয়ে আসি কাজ বুঝায় দেই। কাজ হয়ে গেলে টাকা দিয়ে টুপি নিয়ে আসি,দিন যতই যাচ্ছে ততই টুপি তৈরির লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টুপি কারিগর আছমা বলেন সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই টুপি তৈরি করে যে বাড়তি আয় হয় তা দিয়ে সংসারের উন্নয়নে অন্যান্য আয়বর্ধক কাজ করে থাকি। স্বামীর কাছে চাইতে হয়না। তবে টুপি তৈরি করতে চোখের নানা ধরনের সমস্যা হয়। মাসে ১ থেকে ২ টির বেশি টুপি তৈরি করা যায় না। সেই অনুযায়ী মজুরী খুব কম পাই তাই মুজুরী বাড়ানোর জোর দাবী জানাচ্ছি।

 

মহাদেবপুর উপজেলার নাজমা বলেন টুপি করতে যে সময় ও পরিশ্রম হয় সে ভাবে আমরা মুজুরী পাই না। তাই মুজুরী বাড়ালে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাবে লেখাপড়া করাতে পারতাম ।

 

নওগাঁ সদরের চক আতিথা গ্রামের ৮ম শ্রেনির ছাত্রী রাবেয়া জানান-লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি সেলাই করে যে টাকা পাই লেখাপড়ার খরচ চালাই। বাবার কাছে চাইতে হয়না।

 

বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা, মো. ওয়াসিম সরকার, বলেন এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জন্য বিসিকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষনসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

 

জেলার ১১টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধীক নারী এই টুপি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত। তবে এমন শিল্পকে কুঠির শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দ্রুত সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে সংশ্লিষ্টরা।

সানশাইন / শামি

 

 


প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪ | সময়: ১০:০৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine