সংস্কার হচ্ছে রাণীনগরে আশ্রয়ণের ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো 

রাণীনগর প্রতিনি: 
দেশের বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর নওগাঁর রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অতি ঝুঁকিপূর্ণ দুটি ঘর ভেঙ্গে পুন:নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। অপরদিকে ফেটে যাওয়া অন্যান্য ঘরের বাসিন্দারা ঝড় ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এমন ঘরগুলোতে বসবাস করা নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন।

গত ৯ মার্চ “দুবছর না পেরোতেই ফাটল ধরেছে আশ্রয়ণের ঘরে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত টিম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পরিদর্শন করার পর গত ১৮মার্চ থেকে ঘরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে।

এর মধ্যে ডাকাহার এলাকার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৯টি ঘরের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ ও ১৮নম্বর বাড়িটি ভেঙ্গে পুননির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। আর অন্যান্য ফেটে যাওয়া ঘরগুলো দায়সারা ভাবে সংস্কার করা হ”েছ। আবার ফেটে যাওয়া অংশগুলো সংস্কার করার পরেই সেখান থেকে বালি ও সিমেন্ট খুলে পড়ছে। এতে করে সংস্কার করা ঘরগুলোতে বাস করা মানুষদের মাঝে নতুন করে হতাশা দেখা গেছে।

 

ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮নম্বর ঘরে বসবাসকারী মামুন খন্দকার বলেন আমি একজন রাজমিস্ত্রির সহকারি। তাই আমার ঘরটি ভাঙ্গার সময় দেখতে পেলাম যে কম পরিমাণ উপকরণ দিয়ে তাড়াহুড়ো করে যাতা ভাবে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। তাই হাত দিয়ে ধাক্কা দিলেই ঘরটির দেয়াল ভাঙ্গা যাচ্ছে। ঘরের নিচের ভিত এতোটাই খারাপ করা হয়েছে যে ফেটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ঘরের বিভিন্ন স্থানে মোটা তারের মতো রড ব্যবহার করা হয়েছে। আর ঘরগুলো নির্মাণের সময় ইট এবং ঘরের দেয়ালে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না দেওয়ায় গাঁথুনি মজবুত হয়নি। ফলে পরে প্লাস্টার করার পর ইট পানি শুষে নেওয়ার কারণে হাত দিয়ে চাপ দিলেই প্লাস্টারও উঠে যাচ্ছে। যার কারণে এই ঘরগুলো ফাটার পর কোন সময় যে ভেঙ্গে পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

 

 

৩৭নং ঘরের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন আমার ঘরের ফেটে যাওয়া অংশগুলো সিমেন্ট আর বালি দিয়ে পূরণ করে দেয়ার পরই সেগুলো আবার খুলে খুলে পড়ছে। আর ঘরগুলো যে ভাবে ফেটে গেছে এই রকম দায়সারানো সলমাট করে কোন লাভ হবে না। আমি এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করা নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমার যদি একটু জায়গা থাকতো তাহলে সেখানে গিয়ে খড়কুটো দিয়ে হলেও মাথা লুকানোর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে বসবাস করতাম।

 

 

একই অবস্থা কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২টি ও সিলমাদার গুচ্ছ গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১টি ঘরের। বিশেষ করে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে উপজেলায় নির্মিত ৯০টি ঘরের অধিকাংশ ঘরগুলোতে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে। কোন কোন ঘরের প্রধান দেয়াল, বারান্দা, ঘরের নিচের অংশে বড় বড় ফালটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফেটে যাওয়া ঘরগুলোর দরজা ও জানালা বন্ধ করা সম্ভব না হওয়ায় চরম বেকায়দায় রয়েছেন বাসিন্দারা।

 

সিলমাদার গু”ছ গ্রামের ৭নং ঘরের বাসিন্দা মোছা. হেনা বলেন আমাদের কপাল এমনই খারাপ যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ৩বছর থাকতে না থাকতেই সেগুলো ফেটে গায়ের উপর পড়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে উপহারের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর পরিবর্তে দিন কিংবা রাতে আকাশে মেঘ ডাকলে জেগে জেগে ঘর পাহারা দিতে হয় এই ভয়ে যে, কখন যেন ঝড়ে কিংবা আকাশের ডাকে ঘর ভেঙ্গে শরীরের উপর পড়ে। আর ঘরের নিচে উপরে এমন কোন জায়গা নেই যে সেখানে ফাটলের সৃষ্টি হয়নি। সম্প্রতি দুইজন স্যার এসে আমার ফেটে যাওয়া ঘর দেখে গেছে আর অন্যদের ঘরের ফাটল দেখে বলে গেছে যে সামান্য ফাটলে ঘরের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা না হলে দিন যতই যাবে ততই ঘরগুলো বসবাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান আশ্রয়ণের ১ম পর্যায়ের ঘরগুলো নির্মাণের ডিজাইনে সমস্যা ও বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কম থাকার কারণে ঘরগুলো মজবুত আকারে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। কিš‘ পরবর্তি পর্যায়ের ঘরগুলো অনেক মজবুত করে নির্মাণ করার কারণে সেগুলোতে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখা যায়নি। যেখানে যেখানে আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো সংস্কার করে নিরাপদে ঘরে বসবাস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় মোবাইল ফোনে জানান, ফেটে যাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পরিদর্শন করে দুটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘর ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হ”েছ। এছাড়া প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পরিদর্শন করে অন্য ফেটে যাওয়া ঘরগুলো আপাতত সংস্কার করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আর এই বিষয়টি প্রকল্পের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তিতে যে নির্দেশনা আসবে সেই ভাবে আগামীতে কাজ করা হবে।

 

উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ধাপের আওতায় উপজেলার একডালা, কালীগ্রাম, বড়গাছা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ৯০টি, ২য় পর্যায়ে ৩৩টি ও ৩য় পর্যায়ে ৫৩টিসহ মোট ১৭৬টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে দুটি কক্ষ, সংযুক্ত রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দাও রয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়ন পল্লীতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবয়েল স্থাপন, চলাচলের জন্য রাস্তা ও নামাযের জন্য মসজিদসহ প্রধান প্রধান প্রয়োজনগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৪ | সময়: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine