টানা বৃষ্টিতে আমের উপকার, আলুতে সর্বনাশ!

স্টাফ রিপোর্টার :
চৈত্র মাসের শুরুতেই বৃষ্টি। ফাল্গুন মাসে দিনের বেলায় রৌদের তাপ অনুভূত হলেও রাতে কনকনে শীত অনুভূব করা যেতো। ফাল্গুন মাস শেষ হলে চৈত্রের প্রথম কয়েকদিনে কাঠফাঁটা রৌদ দেখা গিয়েছিলো রাজশাহীতে। মঙ্গলবার (১৯ ই মার্চ) মধ্যরাত থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়। টানা বৃষ্টি চলে বুধবার (২০ ই মার্চ) দুপুর পর্যন্ত (প্রতিবেদনটি লিখা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিলো)। এই দিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীতে দশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সহকারী আনোয়ারা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আজকে ( বুধবার) সারাদিন হতে পারে এবং এই বৃষ্টি আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কমতে পারে। আগামীকাল ( বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি।

হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টিতে আম-কাঠাঁলের উপকার হলেও জমিতে থাকা আলুর সর্বনাশ হবে বলে জানিয়েছে কৃষকরা। রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিলে আলু জমি থেকে প্রক্রিয়াজাত হলেও কিছু সংখ্যক জমির আলু এখনো থেকে গেছে। রাত থেকে হওয়া বৃষ্টিতে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশংকা করছেন কৃষকরা। উপজেলার সাইফূল ইসলাম নামের একজন কৃষক বলেন, আমাদের বিলেও অধিকাংশ জমিতে আলু উঠে গেছে। উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কিছু জমিতে আলু এখনো থেকে গেছে। টানা বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে আলুর জমিতে পানি জমবে। আর জমিতে পানি জমলে আলুতে দাগ সহ পঁচন লাগবে।

কলমা ইউনিয়নের নূর আলম নামের এক কৃষকরে সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা আবহাওয়া বার্তায় বৃষ্টির আগমণের কথা শুনে অতি তড়িঘড়ি করেই আলু মাঠ থেকে উত্তোলন করে নিয়েছিলাম। তবুও আমাদের বিলে কিছু সংখ্যক জমিতে এখনো আলু এখনো থেকে গেছে। এখন বৃষ্টির ভিতরে তো আর আলু উঠানো যাবে না। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রৌদ বের হলে তারপরে জমি থেকে আলু তোলা যাবে। এখন রৌদের আশায় আমাদের থাকতে হবে।

এইদিকে তানোর উপজেলার ন্যায় জেলার পবা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ জমিতে আলু উত্তোলন করা হয়ে গেছে। তবে কিছু সংখ্যক জমির আলু এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি। সেগুলো আলু জমির পাশে ¯‘প করে রাখতে দেখা যায়। বৃষ্টি আসায় আলু নিয়ে চাষীদের পড়তে হয় বিপাকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহীতে ৮৫ শতাংশ জমি থেকে আলু হারভেস্ট হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো আলু জমিতে আছে সেগুলো আলু পরিপক্ক হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। তবে বাকি যেগুলো আলু জমিতে আছে সেগুলো আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে না। এগুলো আলু জমি থেকে উত্তোলন করে খেয়ে ফেলতে হবে।

দিনব্যাপী চলা বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতির চিত্র দেখা গেলেও অন্যদিকে আমের হচ্ছে উপকার। গাছে গাছে মুকুল থেকে আমের গুটি চলে আসতে শুরু করেছে। এইসময় গাছ গুলো বৃষ্টির পানি পাওয়ায় আমের ফলন বাড়তি হবে বলে আশা করছেন চাষিরা। জেলার মোহনপুর উপজেলার আম চাষী হাফিজ আলী বলেন, রাত থেকে হওয়া বৃষ্টির পানিতে আম গাছের গায়ে যেগুলো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ছিলো সেগুলো দূররীকরণ হবে। গাছ সজীবতা পাবে। এবার আমের ফলন ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি।

জেলার পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের আম চাষী রকিবুল ইসলাম বলেন, এইসময় বৃষ্টি হওয়ায় আম গাছের জন্য অনেক উপকার। এইসময় গাছের মুকুল থেকে গুটি আসতে শুরু করছে। এই মুর্হুতের বৃষ্টিতে গুটিগুলো বড় হতে বৃষ্টির পানি সাহায্য করবে। এখন বৃষ্টি হওয়াতে আমাদের আম গাছে কীটনাশক কম লাগবে এবং গাছে পৌকার উপদ্রবও কম হবে ।

এই বিষয়ে পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজান তাসনিম বলেন, এইসময় বৃষ্টি হওয়া আমের জন্য উপকার হবে। এই বৃষ্টির পানিতে গাছ শক্তি পাবে এবং গুটিগুলো ঝড়বে না। এখন বৃষ্টি হওয়াতে আবার আম গাছে পোকার আক্রমণ কমাতে যে কীটনাশক প্রয়োগ করা লাগে তা আর লাগবে না।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪ | সময়: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর