অনলাইন জুয়ায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: বাগমারা সহ আশেপাশের এলাকায় অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে কিশোররা। তারা এই জুয়ার ফাঁদে পড়ে সহায় সম্বল হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে একাধিকবার উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থিত বক্তারা এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারপরও এ নিয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
সভায় বক্তারা উপজেলার আইন শৃংখলার দিক নির্দেশনা-সমাধান, অনলাইনে জুয়া খেলা প্রতিরোধ, বিকাশ প্রতারণা রোধ, ইমো হ্যাকিং চক্রের ফাঁদ থেকে রক্ষা- প্রতিরোধ ও মাদক প্রতিরোধ নিয়ে বিশেষ আলোচনা করা হয়। আইন শৃংখলা সভায় এবারের আলোচনায় সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় অনলাইন জুয়ার রমরমা ব্যবসা।
জানা গেছে, অনলাইনে এই জুয়া খেলতে গিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত্ব হয়ে পড়ছে। কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করে কোটিপতি বনে যাচ্ছে। এছাড়া উড়তি বয়সের ছেলেরা পড়ালেখা বাদ রেখে আসক্ত হয়ে পড়েছে জুয়া খেলায়।
অনলাইনের এই জুয়াড়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য গোপনে তারা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে অমুকে এত লক্ষ অমুখে এত লক্ষ টাকা পেয়েছে এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে। এতে অনেকে লোভে পড়ে ও কৌতুহলী হয়ে নিজের মোবাইলে জুয়া অ্যাপস ডাউন লোড করে সেখানে বিকাশ বা নগত হিসাবে টাকা তুলে নেমে পড়ছে গেম খেলতে।
এভাবে গেম খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়লেও বিষয়টি সে গোপন রাখে এবং বলে বেড়ায় সে এভাবে জুয়া খেলে অনেক টাকা জিতেছে। যাতে এই লাইনে আরো সদস্য বৃদ্ধি পায়। এই অনলাইন জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ভবানীগঞ্জ পৌরসসভায় অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগমারার সব এলাকাতেই এই জুয়া খেলার প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই গেমে আসক্ত অধিকাংশই মাদকাশক্ত। তারা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টায় এই গেম নিয়ে পড়ে থাকে।
বড়বিহানলী, মাড়িয়া, গোয়ালকান্দি ও যোগিপাড়া সহ উপজেলা বেশ কিছু ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরাও এই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের সাথে কিছু গ্রাম পুলিশও যোগ দিয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, তারা আইন প্রয়োগ করে এ সমস্ত অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার বদলে তারাই এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এলাকার সচেতন মহলের মতে, এই গেমে আসক্তির ফলে পারিবারিক নানান অশান্তি, কোন্দল, ঝগড়া বিবাদ দাম্পত্ত কলহ ও সংসার ভাঙ্গার ঘটনা বেড়েই চলেছে। যেভাবে জুয়া খেলার প্রবনতা বাড়ছে তা রোধ করতে না পারলে এর ভয়াবহতা রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাগমারায় পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) কার্যক্রম চালু করতে অনুরোধ জানান কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা।
এবিষয়ে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রন করতে উপর থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেই মতো তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, অনলাইন জুয়ায় কিশোরদের মধ্যে আসক্তির প্রবনতা বেশি। এরজন্য শিক্ষক, অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। এটা নিয়ন্ত্রন করতে সবরকম প্রচেষ্টাই চালানো হবে।


প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৪ | সময়: ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ