সর্বশেষ সংবাদ :

চায়ের দোকান নয় যেন গানের পাঠশালা

 

এনায়েত করিম, রাজশাহীঃ

দোকানের নাম ‘অন্য রকম চা’। দোকানটিতে যারা আসেন তারাও অন্যরকম। কারণ এই চায়ের দোকানে যারা আসেন তাদের অধিকাংশই পরীক্ষার্থী। তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন এই দোকানে চা খেতে খেতে! বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই দোকানটিকে সঙ্গীত চর্চা স্থান বানিয়ে ফেলেছেন। ফলে প্রথম দেখায় কেউ ভাবতে পারেন এটা চায়ের দোকান নয় যেন গানের পাঠশালা।

 

ব্যতিক্রমী এই চায়ের দোকান খুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমন কল্যান কর্মকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মধ্যবর্তী এলাকা অক্টয় মোড়ে হওয়ায় এই চায়ের দোকানে প্রায় সময় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

 

সরেজমিনে ‘অন্য রকম চা’-এর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, এখানে ভিন্ন স্বাদের বাহারী রকমের চা পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে জিরা চা, কলা চা, তুলসি চা, দুধের লেয়ার চা, লেবু লেয়ার চা, অর্জুন চা, ত্রিফলা চা, আচারী চা, ফুর্তি চা অন্যতম। এত বাহারী পদের চা রাজশাহীর আর কোথাও পাওয়া যায় না বলে জানান দোকান মালিক ইমন। ফলে কেউ কেউ চায়ের কাপে চুমুকে-চুমুকে দিচ্ছেন আড্ডা, আবার অনেকেই দল বেধে সঙ্গীত চর্চায় ব্যস্ত।

 

 

ওই চায়ের দোকানে গিয়ে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বকুল আহমেদের সঙ্গে। গান থামিয়ে তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের মাস্টার্সের পরীক্ষা। এখানে চা খাওয়ার সাথে সাথে গানেরও চর্চা করছি৷ এতে একদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতি হচ্ছে, অন্যদিকে চায়ের কাপে চুমুকে-চুমুকে পরীক্ষার কোনো চাপ মাথায় আসছে না। ‘

 

 

একই সুরে কথা বলেন অরেক শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা। তিনি বলেন, ‘সংগীত বিভাগে পড়ার সুবাধে গান আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। যেখানেই যাই গান গাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। কিন্তু এখানে গান গাওয়ার সাথে চলে চায়ের আড্ডাও। ফলে গান গাইতে আলাদা জোস পাওয়া যায়।’

 

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী মতিউর মোর্তুজা কর্মসূত্রে ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাজলা এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ভিন্ন স্বাদের বাহারী রকমের চা পাওয়া যায় বলে প্রথম একদিন এই দোকানে যাই। গিয়েই দোকানটির প্রেমে পড়ে যাই। কারণ এখানে শুধু বাহারী রকমের চা-ই পাওয়া যায় না, বরং তরুণ শিল্পীদের সুরেলা কণ্ঠে ফ্রি গানও শুনতে পাওয়া যায়। এছাড়া দোকানটি সার্বিক পরিবেশও ভালো।

 

 

দোকান খোলার বিষয়ে তরুণ উদ্যোগতা ইমন কল্যান কর্মকার বলেন, ‘করোনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সারাদিন রুমে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। ফলে বিষণ্নতা কাজ করত। মূলত কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চিন্তা থেকেই ‘অন্য রকম চা’ নামে দোকানটি চালু করি। শুরুতে বেশিরভাগ আমার বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসতো। তারা এসে চায়ের কাপে চুমুকে-চুমুকে গানের আড্ডাও জমাতো। এতে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিও হয়ে যেতো। তবে বর্তমানে রাবি ও রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাইরের অনেক মানুষ আসছেন। এতে তারা চা খাওয়ার পাশাপাশি অন্যরকম বিনোদন পাচ্ছেন। আবার দোকানেও বেচা-কেনা অনেক বেড়ে গেছে।’

 

সানশাইন/তৈয়ব

 


প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২ | সময়: ৮:৪০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine