সর্বশেষ সংবাদ :

কর্মই জীবন দেখিয়ে দিচ্ছেন আছমা

রাণীনগর প্রতিনিধি: স্থান-কাল ভেদে বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন রাণীনগরের আছমা বেগম (৬০)। পিঠাপুলি, শাক-সবজি, বিভিন্ন আচার-আনুষ্ঠানে আটা-ঝাল লবণ মিশ্রিত হুরুম ভাজা, পাপড় ভাজা আর আলু ভাজা বিক্রি করেন আছমা। তার স্বামী এবাদুল হক ভ্যান চালক। দুজন মিলে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ শত টাকা উপার্জন করে। তা দিয়েই চলে তাদের জীবন।
রাণীনগর উপজেলা সদর, বড়গাছা কুজাইল, বেতগাড়ী, করজগ্রাম, আবাদপুকুর সহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ছোট-বড় বাজার, সড়কের মোড়ে কোন না কোন দোকানের ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসেছে বাহারি পিঠাপুলির শতাধিক দোকান। শীত মানই তো মজার মজার পিঠা, তাই প্রতিদিন বিকালে জমে উঠে পিঠাপুলি তৈরি বিক্রি আর খাওয়ার ধুম।
ভাপা, চিতাই, সাতপুটি, মোলকা পিঠা। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে সাতপুতি পিঠা, এটি তৈরি করা হয় আল্প পানি, আটা, ঝাল লবণ ও পিঁয়াজ পাতা ঝুরি করে এক সঙ্গে মিশিয়ে তা মাটির তৈরি কড়াইয়ের মত সাতটি হালকা গভীর স্থানে ছোট ডাবু দিয়ে ঢেলে দেওয়া হয়, যা জ্বলন্ত চুলায় কয়েক মিনিট রাখলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু পিঠা, এটি ধনিয়া পাতার চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়, খেতে ভীষণ মজা।
রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে সিম্বা বাজারের ব্রীজ সংলগ্ন সবজির দোকানের সামনে আছমা বেগমের পিঠার দোকান। বৃদ্ধ বয়সে তীব্র শীতের মধ্যে পিঠা বিক্রির ব্যবসা সম্পর্কে কথা শুরু হতেই তিনি বলেন, এছাড়া তো আর কোন উপায় নেই।
রাণীনগর সদরের মধ্যরাজাপুর গ্রামে তার বাড়ি। তাদের ৩ ছেলে ১ মেয়ে। সবার আলাদা আলাদা সংসার। বেঁচে থাকতে হলে তো রোজগারপাতি করতে হবে। আর জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে কিছু না কিছু তো করতেই হবে। যতদিন বেঁচে আছি টিকে থাকার লড়াইয়ে হার মানতে নারাজ তিনি। ছেলেরা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, বৃদ্ধ বাবা-মা’র দিকে ফিরে তাকানোর সময় তাদের নেই। তাই নিজেরাই খেটে খাই। শীতের সময় পিঠা বিক্রি করি, বছরের অন্যান্য সময় বাড়ির উঠানে শাক-সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি আর এলাকায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান গুলোতে অনেক লোক-সমাগম হয়, সেইসব জায়গায় হুরুম ভাজা, পাপড় ও আলু ভাজা বিক্রি করি। আর আমার স্বামী ভ্যান চালায়। দুজন মিলে প্রতিদিন ৫-৬ শত টাকা উপার্জন করি। এটা দিয়েই আমাদের বেশ স্বাচ্ছন্দে চলে।
আছমা বেগম প্রতিদিন সাড়ে তিন শত টাকার পিঠা তৈরির উপকরণ কিনেন। পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই শত টাকা লাভ হয়। ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই পিঠা ১০ টাকা এবং সাতপুটি ও মোলকা পিঠা প্রতি পিচ ৫ টাকা করে।
পিঠা খেতে আসা রশিদ দেওয়ান ও হান্নান মিনা জানান, তারা প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পিঠা খান, এইসব পিঠা তাদের পছন্দের। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য পিঠা আকারে ছোট হওয়া সত্ত্বেও দামে বেশি।
আছমা বেগম ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বাড়তি আয়ের আশায় অনেকেই অন্যান্য পেশার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় এ ব্যবসা করছেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ