গ্রেফতার হয় নি চাঁদ, রাজশাহীতে আরো ২ মামলা : বিএনপির পদযাত্রা ঘিরে রাজশাহী থমথমে

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করে পুরো নগরী কার্যত অবরোধ করে রেখেছে পুলিশ। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়সহ নগরীতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকা দিনভর কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মুখে নির্ধালিত পদযাত্রা কর্মসূচি করতে পারে নি বিএনপি।
তবে বিএনপির দাবি, সিটি নির্বাচন নয়, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ঘটনার কারণে বিএনপিকে কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ। আর পুলিশ বলছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মহানগর বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করেছে।
রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপির) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম জানান, সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলে মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজশাহী মহানগরী আইন, ১৯৯২-এর ধারা ৩০ অনুসারে পুলিশ কমিশনার সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
এদিকে পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর মালোপাড়া এলাকায় বিএনপি কার্যালয়, ভুবনমোহন পার্ক, গণকপাড়া, সোনাদীঘি মোড় ও বাটার মোড় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে পুলিশ। মাঠে দেখা যায় পুলিশের বিশেষায়িত টিম সিআরটি। বিপুলসংখ্যক ডিবি সদস্য টহল দিচ্ছে। সাদা পোশাকেও রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। দিনভর প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের এপিসি গাড়ি এবং জলকামানও।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা মঙ্গলবার নগরীর ভুবনমোহন পার্ক থেকে সাহেব বাজারে জিরো পয়েন্ট হয়ে রেলগেট পর্যন্ত পদযাত্রা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবু সাঈদ চাঁদের ঘটনার কারণে পুলিশ আমাদের কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে। আমরা এখন বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’
এরশাদ আলী ঈশা জানান, সোমবার রাতে মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল হুদাসহ যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজন নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা ও পুঠিয়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকে পলাতক চাঁদ। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদের নামে আরেকটি মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে নগরীর কাশিয়াডাঙা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এবার পুলিশ নিজেই এই মামলার বাদী হয়েছে। রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান মঙ্গলবার এ মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতার পরিকল্পনা ও আগামীর নির্বাচন বানচালের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।
এর আগে হুমকির ঘটনায় রবিবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এরপর থেকে তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। তবে যেকোনো সময় চাঁদ গ্রেফতার হবে বলেও উল্লেখ করেন এসপি।