বাগমারায় পুকুর খননের প্রতিবাদে হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায়

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারায় হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশত মানুষ। সোমবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী মহিষার বিলের সামনের সড়কে কয়েকশত নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।
মানববন্ধনে কৃষকরা জানান, গাঙ্গোপাড়া মহিষার বিলে আবাদি জমি ছিলো প্রায় ৪০০ একর। এর মধ্যে পুকুর খনন করে ইতিমধ্যে সেই বিলের ২৫০ একর জমি দখল করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার ১০০ একর জমিতে পুকুর খননের চেষ্টা করছে একই গ্রামের অসাধু ব্যবসায়ী মাহাবুর রহমান, আজাহার আলী, সালেক আলী ও চঞ্চল নামের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। কিন্তু এই বিলে পুকুর খনন হলে প্রায় পাঁচশত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এবার পুকুর খনন করতে হলে কৃষকের লাশের উপর দিয়ে গিয়ে পুকুর খনন করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তারা।
এই বিলে গাঙ্গোপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর কবিরের জমি রয়েছে দুই বিঘা। তিনি জানান, রোববার বিকেলে ভেকু মেশিন নিয়ে বিলে নেমে পুকুর খননের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন গিয়ে তাদের বাধা দেয়। জনতার রোষানলে পড়ে তারা পুকুর খনন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের পুকুর খননের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভেকু মিশিন এখনো তারা নিয়ে যায়নি। সেখানে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় তারা ভেকু নিয়ে বিলে নামতে পারে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কমনা করছি।
গাঙ্গোপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম নামের এক কলেজ শিক্ষকের ওই বিলে জমি রয়েছে ছয় বিঘা। কোন অর্থের বিনিময়ে তার জমিতে তিনি পুকুর খনন করতে দিতে রাজি নন। কিন্তু জোর করে তার জমিতে পুকুর খননের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই বিলে হাতে গনা কয়েকজন পুকুর খনন করার জন্য জমি লিজ দিয়েছে। বাকি সবাই জমি দিতে রাজি নন। জোর করে অন্যদের জমি দখল করে পুকুর খনন করতে চায় তারা।
শহিদুল ইসলাম বলেন, পুকুর খনন করা হলে শুধু তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তেলিপুকুর, গাঙ্গোপাড়া, মারিয়া, হাজরাপাড়া, চাম্পাকুড়ি, লাড়ুপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিলে পুকুর খনন করা হলে বর্ষার পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে উঁচু জমিসহ গ্রামগুলো প্লাবিত হবে। ফলে উঁচু জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে গ্রামগুলোতে মানুষের বসবাস দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই পুকুর খনন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মানববন্ধনে জমির মালিক খলিলুর রহমান, আফসার প্রামানিক, সোলেমান আলী, আব্দুর রশিদ, হাসান আলী বক্তব্য রাখেন। তাদের সবাই এক থেকে চার বিঘা পর্যন্ত জমি রয়েছে।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, পুকুর খনন বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। কোনভাবেই পুকুর খনন করতে দেওয়া যাবে না। ইতোমধ্যেই অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুকুর খননকারি ও ভেকুর মালিক ছাড়াও যারা জমি ইজারা দিয়েছে তাদেরকে এ সব মামলায় আসামী করা হয়েছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ | সময়: ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ