সর্বশেষ সংবাদ :

বিএসএফের গুলিতে নিহত রইসের লাশ পেয়ে স্বজনদের আহাজারি

স্টাফ রির্পোটার, শিবগঞ্জ: স্বামীর পৈত্রিক ভিটায় পৌছার পর স্বামীর মরদেহ নিয়ে বিলাপ করছিলেন যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) সদস্য রইসউদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন বেগম। আর দাদা ও নানার কোলে ২ বছর বয়সী শিশু রাইশা খাতুন ও ৪ মাস বয়সী হাসান আলী এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। পিতা এত কাছে কফিনে শুয়ে থাকলেও সন্তানরা যেন কাঁদতে ভ’লে গেছে। স্ত্রীর পাশে মায়ের বুক ফাটা আত্ননাদ নিহত রইসউদ্দীনের মা রুমালি বেগমের।
মরদেহ বাড়িতে আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা মৃত রইসউদ্দীন কে একনজর দেখতে ভীড় করে। রইসের কফিনের উপর মুড়িয়ে দেয়া ছিল বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পতাকা। আশে পাশের পরিবেশ যেন কান্নার আহাজারিতে ভারী হয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের শ্যামপুরে রইসউদ্দীনের বাড়ির সামনের চিত্রটি ছিল এমনই।
কৃষক কামরুজ্জামানের ৩ ছেলের মধ্যে রইস ছিল এলাকার প্রিয় মানুষ। গ্রামের সকলের বিপদে আপদে পাশে থাকায় স্বজনদের পাশাপাশি বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মধ্যেও ছিল আর্তনাদ। অল্প বয়সে এমন মৃত্যু কেউ যেন মেনে নিতে পারছেন না। এসময় গ্রামবাসীদের অনেকেই এমন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।
এরআগে বিকেল ৪ টার দিকে যশোর থেকে বিজিবির একটি দল হেলিকপ্টার যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে রইসের মরদেহ পৌছে দেন। পরে বিজিবি মরদেহটি এ্যামুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের শ্যামপুরে নিয়ে আসে। এ সময় বিজিবির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল নাহিদ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর ইমরুল কায়েস, সহকারী পরিচালক মো: জামাল উদ্দিন, সহ উদ্ধোতণ কর্মকর্তারা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে শ্যামপুর নুরেস মোড় এলাকায় আল মাদরাসাহ আল আরাবিয়্যাহ মাদ্রাসায় জানাযা শেষে শ্যামপুর ভবানীপুর কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।
মা রুমালি বেগম বিলোপ করতে করতে বলেন, কেন তার ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করেছে তার সন্তান? এ সময় তিনি তার সন্তানের পরিবারের একটি আবাসস্থল এবং রেখে যাওয়া ২ সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার দাবী করেন সরকারের প্রতি। স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোসা শাহনাজ পারভিন লিলি জানান, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এলাকার একজন শহীদ হয়েছেন।তাই সরকার যেন শহীদ ঐ বিজিবি সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব নেয় এটায় দাবী এলাকাবাসীর।
প্রসঙ্গত: ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোমবার ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারী করার সময় চোরাকারবারীদের ধরতে সিপাহী রইস উদ্দীন দলছুট হয়ে সীমান্তে এগিয়ে গেলে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে মারা যান।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ | সময়: ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ