বিটুমিন পোড়ার গন্ধে ভুগছে বড়াইগ্রামবাসী

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: বড়াইগ্রামের রামাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখে চলছে রাস্তার সংস্কার কাজ। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালি ও বিটুমিন (পিচ) গলানোর দুর্গন্ধে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা সহ রামাগাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী ও গ্রামের বাসিন্দারা।
একই সঙ্গে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলোয়াড়রা। এদিকে, ধোঁয়া ও বালুর হাত থেকে রক্ষার নামে শ্রেণিকক্ষের সামনের অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ক্লাস বন্ধ থাকলেও ধূলাবালি, ধোঁয়া আর কালিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও সৌন্দর্য।
স্থানীয়রা জানান, গত ৪-৫ দিন আগে ঠিকাদার মনির হোসেন পাটোয়ারী পাশর্^বর্তী বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখৈর হতে দয়ারামপুর অভিমুখী সংস্কারের জন্য এই বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখেন।
বুধবার হতে তিনি বিদ্যালয় মাঠেই পিচ (বিটুমিন) গলিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করেছেন। মাঝে ঘণ্টা দুয়েক বিরতি দিয়ে সারাদিন কাজ চলে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া, ঝুঁট পোড়ানোর গন্ধ ও মিহি বালু ছড়িয়ে পড়ে রামাগাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ মাঠ সংলগ্ন বাসিন্দারা পড়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলের পাকা ভবনের সামনে দিয়ে বড় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। মাঠজুড়ে বালু আর পাথর, বিটুমিন। এক পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে চুলায় জ্বাল দেয়ার ঝুট কাপড়। মাঠে চুলা তৈরি করে পিচ গলানোসহ মিক্সার মেশিনে পিচের সঙ্গে পাথর বালু মেশানো হচ্ছে। চুলা ও মিক্সার মেশিনের কালো ধোঁয়া সহ বালু ও ছাই উড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত নাকেমুখে ঢুকছে সেসব ধোঁয়া ও বালু।
রামাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত হাসান ও হেলাল সরকার জানায়, ‘বার্ষিক পরীক্ষার পর বর্তমানে স্কুল ছুটি। এখন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে মাঠে খেলাধুলা করবো। কিন্তু মাঠ জুড়ে রাস্তার জিনিসপত্র রাখায় আমরা খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
এ ব্যাপারে রামাগাড়ী গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ বলেন, সবসময় বাতাসে বালু উড়ে এসে ঘরের সব আসবাবপত্র, কাপড়চোপড়, খাদ্যদ্রব্যে পড়ছে। এভাবে নাকে মুখে ধোঁয়া ও বালু ঢুকে বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
রামাগাড়ী বাজারের ৫-৬ জন ব্যবসায়ীও এমন মত প্রকাশ করে বলেন, উড়ে আসা বালু পড়ে দোকানের বিভিন্ন পণ্য নোংরা হচ্ছে, জিনিসপত্র কিনতে আসা লোকেরা বিরক্ত হচ্চে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, পিচ পোড়ানোর গন্ধে বমি বমি ভাব আর মাথা ঘোরানোসহ ঠিকমতো খেতে পারি না।
ক্রীড়ামোদি কাইয়ুম হোসেন সহ অনেকে জানান, আগে আমরা নিয়মিত মাঠে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু মাঠে পাথর বালি রাখার পর থেকে খেলাধুলা বন্ধ। কাজ শেষ হয়ে গেলেও ঘাসের ভেতরে পড়ে থাকা পাথর কুচির কারণে মাঠ খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
মাঠে কাজের তদারকিতে থাকা ঠিকাদারের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অনুমতি নিয়েই আমরা মাঠে কাজ করছি। তারপরও কিছু সমস্যা হতে পারে, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। প্রধান শিক্ষিকা আব্দুল হালিম জানান, রাস্তা সংস্কারের সুবিধার্থে মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখার অনুমতি দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাসেল বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ