সর্বশেষ সংবাদ :

সরষে ক্ষেতে মধু আহরণে চাষী

তোফাজ্জল হোসেন, নিয়ামতপুর: মাঠে মাঠে মৌ মৌ গন্ধ, ভ্রমর ছুটছে মধু আহরণে, সরিষার ক্ষেতগুলো যেন প্রকৃতির হলুদ কন্যায় সেজেছে, দিগন্ত জুড়ে হলুদের বাহার, বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুলগুলো এ দৃশ্য সকলেকেই আকৃষ্ট করছে। উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় বেড়েছে সরিষার আবাদ।
বাজারে তেলের দাম বেশী হওয়ায় এবার সরিষা চাষে ঝুকেছে কৃষক, কৃষিতে খরচ বেড়েছে তাই অল্প জমিতে বেশী ফসল ফলন করার আশায় রোপা আমণ কাটার পরই জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষে প্রস্তুত করে কৃষকরা। স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষে বেশী লাভ। প্রতিবিঘা জমিতে সরিষার গড়ে ৬ থেকে ৭ মণ হয়। যা ৬-৭ জনের একটি পরিবারের সারা বছরের তেলের চাহিদা পূরন করতে পারে। এর মেডিসিনাল ভ্যাল্যুও আছে।
সরিষার শিকড়ে নডিউল থাকে যা জমিতে নাইট্রোজেন যোগ করে। জৈব সার হিসেবে ও সরিষা গাছ অনেক গুরুত্ববহন করে। সরিষার খৈল পুকুরে এবং জমিতে ও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে খুব গুরুত্বপুর্ণ। সরিষার চাষের পাশাপাশি কৃষকরা সেই জমি থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে মধু সংগ্রহ করে। মধু সংগ্রহ করলে সরিষার ফলন আরো বৃদ্ধি পায়। তাই কৃষকরা সরিষার ফলন বৃদ্ধি করা এবং সাথে আরো বাড়তি আয় করার জন্য উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের কৃষকরা এই মধু সংগ্রহ করছেন।
উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় বারি-১৪ ও বারি-১৫, বারি ১৭, বারি ১৮, বিনা -৪ জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করবেন তারা। ফলে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায় সরিষা গাছে ফুল এসেছে অনেক গাছে ফলও এসেছে সরিষা চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫০ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর। বাম্পার ফলনের আশা কৃষক ও কৃষি বিভাগের।
অনেক কৃষক জানান প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। কম সময়ে কম খরচে বেশী লাভ হয় সরিষা তোলার পরে বোরর আবাদ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, স্বল্প খরচে, কম সময়ে লাভজনক ফসল এটি। সরকারের কৃষিতে সুদৃষ্টি রয়েছে উপজেলায় সরকারী ভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে হাজার হাজার কৃষককে। ভাল বীজ এর পর্যাপ্ততা এবং প্রণোদনা প্রদান ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষা আবাদ বেড়েছে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সরিষা আবাদের ফলে তেলের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের সরিষার জমি পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মঞ্জুরে মাওলা।
এ সময় ভাবিচা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওবাইদুল হকের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন, জেলা প্রশিক্ষন অফিসার মঞ্জুরে মাওলা, ভাবিচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামসুজ্জোহা, উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সফিউল হক, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শিমুল, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, জামিনুর রহমান।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ