নাটোর সদরে আ’লীগে ১০ মনোনয়ন প্রত্যাশী

আনোয়ার পারভেজ, নাটোর: নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে ময়দানে সভা সমাবেশ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের ১০ শীর্ষ নেতা। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন সীমাবদ্ধ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পরিবারের মধ্যেই। জাতীয় পাটি ও জামায়াতসহ অন্য দলগুলো এখানে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার মধ্যে নাটোর সদরে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্যে কোন্দল হানাহানি মারপিট ও মামলা-পালটা মামলার ঘটনা ঘটছে আহরহ। এর মাঝেই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে ময়দানে কাজ করছেন বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান ছাড়াও এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আরো কাজ করছেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পিপি সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সহ-সভাপতি নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, যুগ্ম-সম্পাদক নাটোর বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ ও সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এমরান সোনার, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও জেলা মহিলা লীগের সভাপতি রত্না আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার।
নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনে বরাবরের মতো বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কারাবন্দি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এই আসন থেকে তিনি টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শেষ বার তিনি স্থানীয় সরকার ও পরে ভূমি উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মামলার কারনে গত দুই সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি।
এবারো কারাবন্দি এই বিএনপি নেতা প্রার্থী হতে না পারলে গত দুই নির্বাচনের মতোই দলের মনোনয়ন চাইবেন তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। দুলু বা তার স্ত্রী যেই হোক না কেন দুলু পরিবারের বাহিরে যাবে না নাটোর সদরের আসনের মনোনয়ন এটা নিশ্চিত বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীরা।
জাতীয় পাটি থেকে এখানে মনোনয়ন চাইবেন জেলা যুগ্ম-আহবায়ক সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুনবী মৃধা। তিনি নাটোর পৌরসভার মেয়র পদে ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে সম্মানজনক ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে এখানে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক ইউনুস আলীকে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি এমপি শিমুল বিরোধী হিসেবে পরিচিত ইসতিয়াক আহমেদ ডলার ও শফিউল আযম স্বপনের হাতে চলে যাওয়ার পর থেকে নাটোরে আওয়ামী লীগের মধ্যে শুরু হয় চুড়ান্ত দ্বন্দ্ব।
সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি রত্না আহমেদসহ নাটোরে ৫জন এমপি। দ্বন্দ্ব চুড়ান্ত রুপ নিলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকসহ জেলার বাকী চার এমপি একাট্টা হয়ে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা চারজন দলের সভাপতির কাছে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এক পর্যায়ে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী সাত বছর দায়িত্বপালন শেষে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তরুন নেতা এমপি শিমুলকে। নতুন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান।
এর আগে থেকেই আলাদা দলীয় কর্মসূচি পালন করতেন এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীরা। আগে এমপি শিমুলের নিয়ন্ত্রণে ছিল দলের অস্থায়ী জেলা কার্যালয়। চেয়ারম্যান রমজান ও তার অনুসারীরা শহরের নিচাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করতেন। নতুন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের অস্থায়ী জেলা কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন শরিফুল ইসলাম রমজান।
এমপি শিমুল অনুসারীরা তার (এমপির) নতুন বাড়িতে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ছাড়াও বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি, দলিল লেখক সমিতিসহ জেলা সদরের বিভিন্ন কমিটি একের পর এক নির্বাচন দিয়ে এমপি শিমুলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রমজান। ফলে রমজান পন্থিরা মনে করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নাটোর সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হবে।
তারা মনে করেন, শরিফুল ইসলাম রমজানই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন। অপর দিকে শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির অনুসারীরা মনে করেন, দল এবারো এমপি শিমুলকেই মনোনয়ন দিবে। তাদের মতে এমপি শিমুলকে মনোনয়ন না দিলে এই আসনই আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে না।
প্রকাশ্যে শিমুল এমপি বিরোধী হিসেবে ভুমিকা রাখা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস গত ৩০ আগষ্ট হঠাৎই মারা যান। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। সেখানে উপ নির্বাচনে এমপিও হয়েছেন শিমুল পন্থি নেতা ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। সিরাজুল ইসলাম সভাপতি এবং ডা. পাটোয়ারী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এমপি শিমুল আরো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে করেন তার অনুসারী।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি ও যুগ্ম-সম্পাদক নাটোর বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ অনুসারী নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত দু বছর থেকে নাটোরে আওয়ামী লীগের রমজান ও শিমুলপন্থী নেতাকর্মীদের মধ্যে যেভাবে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছে তাতে দলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নাটোরে বিকল্প প্রার্থীর কথা চিন্তা করবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৩ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ