উচ্ছাসিত শিক্ষার্থীরা:১৮ বছরের দুঃখ নিরসন করলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক

শাহ্জাদা মিলন :
পূজার আগে স্কুলের গেটের সামনে একটা পোল ছিল কারা যেনো সরিয়ে দিয়েছে। এখন কতো আরামে স্কুলে ঢোকা যাচ্ছে। এখন আর ধাক্কা লাগবে না আমাদের। এক দৌড়ে বাড়ি থেকে আসবো,এক দৌড়ে বাড়ি যাবো। সাইকেল থেকে নামতে হবে না পাকা রাস্তায়। দূর্গা পূজা শেষ হওয়ার পরে  রবিবার (২৯ শে অক্টোবর) প্রথম দিনের ক্লাসের ফাকে খুশি মনে সহপাঠির সাথে খেলা অবস্থায় বলছিলেন পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী কাশফিয়া, তামিম,তানভির, পারিশা, রিমিরা। স্কুলটির নাম কাজলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯২৭ সালে। নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালে।

১৮ বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে দাড়িয়ে ছিল এই বৈদ্যুতিক পোল –  ( ফাইল ছবি) সানশাইন

 

তবে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু:খ ছিল ১৮ বছর ধরে। ছোট্ট একটি বিষয় তবে কেউ গুরুত্ব সহকারে নেন নি। এই বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে রয়েছে সরু গলি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দুইয়ের অধিক এক সাথে বের হতে পারে না। এছাড়া কোন রিকশা কিংবা অন্য কোন যানবহন এমনকি সাইকেল নিয়ে ঢুকলেও বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে থাকতো মাঝখানে একটি বৈদ্যুতিক পোল। যার কারনে গত দেড়যুগ ধরে কষ্ট ভোগ করেছেন এখানে শিখতে আসা শিক্ষার্থী,পাঠদান করতে আসা শিক্ষক ও সন্তানকে এগিয়ে দেয়া ও নিয়ে যাওয়ার জন্য আসা অভিভাবকরা।

বৈদ্যুতিক পোল সরানোর পর বর্তমান অবস্থা –  সানশাইন

 

দৈনিক সানশাইনে ১৫ ই অক্টোবর সংবাদ প্রকাশের পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এঁর নজরে এলে তিনি উদ্যোগ নেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা) জয়া মারিয়া পেরেরা কে তিনি দিক নির্দেশনা দেন। সেই মোতাবেক (১৯ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জয়া মারিয়া পেরেরা কাজলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সরেজমিন দেখে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন দ্রুত বিষয়টি সমাধান করার। সেই নির্দেশনা পেয়ে মাত্র ৩দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের গলির মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে থাকা বৈদ্যুতিক পোল সরিয়ে কিনারে বসানো হয়। ফলে বিদ্যালয়টি একসাথে বের হতে সমস্যার সমাধান হয়েছে।

মূল সড়ক থেকে বিদ্যালয়টিতে ঢোকার গলি  – সানশাইন

 

শিক্ষার্থীরা অনুরোধ করেন গলির প্রাচীর মাত্র দুই হাত সরানো গেলে বিদ্যালয়টির আর কোন সমস্যা থাকবে না। আর গলিতে ড্রেন থাকায় ময়লা যখন তোলে তখন হাটা যায় না। এটার সমাধান হলে স্কুলে আসতে তাদের আরো আনন্দ লাগবে।

টিফিনের পর স্কুল থেকে বের হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা ( ২৯ অক্টোবর তোলা ছবি) –  সানশাইন

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কোহিনুর বেগম, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের স্মার্ট শিক্ষার্থী চাই। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রাথমিক শিক্ষা দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে। তার একটি নতুন সংযোজন হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। যার ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি বিদ্যালয়ে। যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

 

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার মাঠ, রয়েছে ফুলের বাগান। দেয়ালঘেরা বিদ্যালয়টির চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন ফুল, ফল ও প্রাণীর ছবি, রয়েছে মনীষীদের বাণী, নানান ছড়া। সজ্জিত ক্লাস রুম,বঙ্গবন্ধু কর্নার,মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম,লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ সকলের সাহায্যে স্কুলটিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন শিক্ষকরা। তবে স্কুলের কষ্ট শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও প্রতিদিন সম্মুখিন হতাম। রিকশা নিয়ে ঢোকা যেতো না। গলিটাও ইটের দিয়ে তৈরি হওয়ায় রোদ না পড়ায় বর্ষা কালে পা পিছলে যায় অনেকের। বড় ধরণের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় প্রায় ২০ মিটার গলি। আর গেটের সামনে বৈদ্যুতিক পোল সরানোটা ছিল খুব জরুরী।

 

 

তিনি আরো বলেন, আপনাদের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা) স্যার নিজে পরিদর্শন করেন। এত দ্রুত সমাধান করে দেয়ায় তিনি রাজশাহী জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় আমি পরিদর্শন করেছিলাম। দ্রুত সমাধানের জন্য ডিসি স্যারের নির্দেশনা পালন করেছি মাত্র।

 

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার কাজ করছে শিক্ষা বিস্তারে। শিক্ষা বিস্তারে যে কোন ধরনের বাঁধা থাকলে সেটি দূর করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আরো যদি এ ধরনের সমস্যা পাওয়া যায় তবে সেটির সমাধান করা হবে।

উল্লেখ্য রাজশাহীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় কিছুদিন আগে নির্বাচিত হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অর্ন্তগত ২৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান, স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা, ডিজিটাল ক্লাস রুম, মানসম্মত ফলাফল, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমানো, আধুনিক সুবিধাসহ নানা বিষয়ে স্কুলটিকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩” প্রদানে জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়েছে।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩ | সময়: ২:১২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine