শেখ হাসিনা কোথাও কোনো বৈষম্য চায় না : শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোথাও কোনো বৈষম্য দেখতে চায় না, প্রতিটি মুহূর্ত তিনি সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শনিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর উপরভদ্রায় মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা জানান।
ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা হতে হবে জীবনমুখী। শিক্ষা অনুধাবন করতে হবে। অর্জিত শিক্ষা যদি কাজে না লাগে তাহলে সেই শিক্ষার মূল্য কোথায়? শুধু চার দেয়ালে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষাই শিক্ষা নয়। শিক্ষা হতে হবে সব দিক থেকেÑ কমিউনিটি থেকে, পরিবেশ থেকে, মানুষ থেকে, প্রকৃতি থেকে; জ্ঞান যাতে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো যায়, শিক্ষা যেন জীবনচর্চার অংশ হতে পারে।
মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি কোথাও কোনো ধরনের বৈষম্য দেখতে চান না। তাঁর কারণেই বিগত ১৫ বছরে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজ পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যার হাতেই হয়েছে বলে তিনি জানান।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কী পারে তা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তারা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিখছে। তারা বিজ্ঞান জানেÑ এটা তারা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে। তারা এখন মেধার পরিচয় দিয়ে বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ তৈরি করে নিচ্ছে। এ সময় এবতেদায়ী উপবৃত্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে জানিয়ে শিগ্গিরই এ ব্যাপারে সুসংবাদ দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের অভয় দিয়ে বলেন, আপনারা কোনো কিছুকেই ভয় পাবেন না। আপনারা মানুষ তৈরির কারিগর, আলোর দিশারী। আপনারা ছেলে-মেয়েদের সঠিক পথ দেখান।
শিক্ষা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনা স্মরণ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু মনে করতেনÑ শিক্ষায় বিনিয়োগই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। তিনি ঔপনিবেশিক কেরানি পয়দা করা শিক্ষাব্যবস্থার ধারা পছন্দ করেননি। তিনি মনে করেছিলেনÑ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার ধারায় একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তাই তিনি যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। এখন তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা দুঃসহ বেদনা বুকে নিয়ে ৪২ বছর ধরে বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত কাজ করছেন। তিনি কাউকে কম দেন না। তিনি সব সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সামাজিক নিরাপত্তা দিচ্ছেন। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্তাকে ভাতা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সে একা নয়, তার পাশে সরকার আছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে যেন সন্তান ভরণ-পোষণ দেয় সেজন্য তিনি আইন করে দিয়েছেনÑ কেউ আর বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে রেল স্টেশনে বা কোথাও ফেলে রেখে যেতে পারবে না।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ লাখের বেশি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কী দঃসহ জীবন ছিল আশ্রয়হীন মানুষগুলোর? আজ এখানে তো কাল ওখানে, আজ একজনের বারান্দায় তো কাল আরেক জনের বারান্দায়Ñ এই কষ্টের জীবন থেকে আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে নিয়ে এসে জমিসহ ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি মানুষের আজকে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। আশ্রয়হীন মানুষগুলো নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়েছে।
গত ১৫ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে অসংখ্য শিশু না খেয়ে ঘুমাতে যেত, না খেয়ে মারা যেত, বহু সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা পেত না, অসংখ্য মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, অসংখ্য ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে পারত না, গায়ে কাপড় ছিল না। আজ ১৫ বছর পরে এক জন মানুষ কী না খেয়ে মারা যায়? সবার খাবার আছে, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়, মানুষ চিকিৎসা পায়, সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে। ১৫ বছর আগে মাত্র ২৬% মানুষ বিদ্যুৎসেবা পেত। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট- এর ফলে অর্থনীতি বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে; মানুষ সুফল ভোগ করছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দাতার হাতে পরিণত করতে চান বলে এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন, জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রধানগণ বক্তৃতা করেন।
পরে বিকালে শিক্ষামন্ত্রী ইনস্টিটিউট অব বিজনেস স্টাডিজ (আইবিএস) এর উদ্যোগে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) সিনেট ভবনে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক কর্তৃক আয়োজিত ‘আশা-নিরাশায় দোলায় হে’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ওই অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন আইবিএসের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবির উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। সভাপতিত্ব করেন আইবিএসের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজিমুুল হক।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ