বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন যেসব নোবেলজয়ী

সানশাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল। যারাই এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা বিশ্বের সকলের কাছে অনেক সমাদৃত। সকলেই তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে সবসময়। তাদের প্রতি জনসাধারণের এক ধরনের অলিখিত শ্রদ্ধা থাকে, থাকে ভালোবাসার বিশেষ জায়গা। এমন খুব বেশি নোবেলজয়ী নেই যারা অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। যারা আছেন তাদের সংখ্যা কম।
সম্প্রতি বাংলাদেশে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়েছে ১৮টি মামলা। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এসব মামলা দায়ের করা হয়। আর এই মামলা দায়ের করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মচারী, যারা ২০০৬ সালের আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আইনজীবীরা জানান, ১৮ ব্যক্তি আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করলেও সেগুলোর ধরন একই রকম। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি এটাই ছিল অভিযোগ। এ ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক দায়ের করা হয়েছে আরও একটি মামলা। বর্তমানে সেটির শুনানি চলছে। এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। দেশের নির্বাচনের এ মৌসুমে ড. ইউনূসকে নিয়ে বিদেশি মহলও সোচ্চার অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য অনেকেই করছেন সুপারিশ।
এর আগে বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে একশর বেশি নোবেল বিজয়ীর স্বাক্ষর রয়েছে। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা এবং নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে।
অ্যালেস বিলিয়াতস্কি: কিছুদিন আগেই বেলারুশের আদালত শান্তিতে নোবেলজয়ী অ্যালেস বিলিয়াতস্কিকে কারাদণ্ড দিয়েছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী অ্যালেস বিলিয়াতস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২১ সালের দিকে বেলারুশে বিতর্কিত নির্বাচনের সময় বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়লে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সমর্থকরা একে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর প্রতিশোধমূলক আচরণ বলেও অভিযোগ করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ১৯৮০-এর দশকে পশ্চিম ইউরোপে ৬০ বছর বয়সী বিয়ালিয়াস্কি মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন। যখন লুকাশেঙ্কো রুশদের ছায়ায় বেলারুশকে গড়ে তুলতে চাইছিলেন তখনো প্রতিবাদ করেন তিনি।
অং সান সু চি: মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো গৃহবন্দি হন অং সান সু চি ১৯৮৯ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তবে, সেসময় ক্ষমতার অপব্যবহার, ধর্মীয় উস্কানি ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ আনা হয় সু চির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এসব দায় অস্বীকার করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে জান্তা সরকারের মাধ্যমে সু চি ক্ষমতাচ্যুত হন। এখনো কারাগারে রয়েছেন তিনি। এর আগে তাকে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি সু চির সাজা ছয় বছর কমানো হয়েছে। জান্তা সরকারের বিভিন্ন সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, ৭৮ বছর বয়সী সু চিকে গৃহবন্দি হিসেবেই রাখা হবে বলেই ধারণা করা হয়।
লিউ শিয়াবো: নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাত্র এক বছর আগে ২০১০ সালে চীনা মানবাধিকার কর্মী লিউ শিয়াবোকে জেলে পাঠানো হয়। চীনে অহিংস উপায়ে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য তিনি আন্দোলন করছিলেন। আর এই আন্দোলনের করেই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। চীনে ক্ষমতার দান উলটে দেওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে তাকে বিচার করে জেলে পাঠানো হয়। তার এগারো বছরের জেল হয়েছিল। লিউ শিয়াবো চীনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। উত্তর-পূর্ব চীনের একটি হাসপাতালে লিভার ক্যান্সারে ৬১ বছর বয়সে বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ভন অজিয়েস্কি: নোবেলজয়ীদের শাস্তি পাওয়ার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, হিটলারের আমলে নোবেল পুরস্কারজয়ীর বিচারের মুখোমুখি হবার একটি ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৩৫ সালে ভন অজিয়েস্কিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি বাকস্বাধীনতা ও শান্তির সপক্ষে তার উজ্জ্বল অবস্থান রেখেছিলেন। এ কারণেই তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তবে পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি যেন তা নরওয়েতে গ্রহণ করতে যেতে না পারেন সে কারণেই তাকে জেলে পাঠানো হয়। এ সময় তাকে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল।
এর আগে ১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতা দখলের আগে বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত করা হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এই জার্মান নাগরিককে। সেসময় হিটলার এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি কোনো জার্মান নাগরিককে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আইনও চালু করেন।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ