বাংলাদেশে সেই বিতর্কিত ঘটনায় আক্ষেপ নেই হারমানপ্রিতের

স্পোর্টস ডেস্ক: মিরপুরে গত মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ শেষে বিস্ফোরক মন্তব্য ও সেদিনের নানা বিতর্কিত কাণ্ডে কোনো অনুতাপ বা অনুশোচনা নেই হারমানপ্রিত কৌরের। কোনো ক্রিকেটার বা কাউকে ভুল কিছু বলেননি বলেও দাবি করলেন তিনি। ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, মাঠে তিনি যা দেখেছেন, সেসবই তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজের শেষ ম্যাচে গত ২২ জুলাই আউট হওয়ার পর ব্যাট দিয়ে স্টাম্প উড়িয়ে দেন হারমানপ্রিত। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে তিনি নজিরবিহীনভাবে সরাসরি কড়া সমালোচনা করেন আম্পায়ারদের। পরে তিনি কটূ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ দল ও অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে। দিন তিনেক পরে আইসিসি তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ।
ঘটনার প্রায় এক মাস পর জানা গেল হারমানপ্রিতের মন্তব্য। ইংল্যান্ডের দা ক্রিকেট পেপারকে ভারতীয় অধিনায়ক যা বললেন, তাতে পরিষ্কার যে নিজের জায়গায় তিনি এখনও অটল। “আমি বলব না যে কোনো কিছু নিয়ে আমার আক্ষেপ আছে, কারণ দিনশেষে ক্রিকেটার হিসেবে চাওয়া থাকে মাঠে যেন ন্যায্য কিছু হয়। ক্রিকেটার হিসেবে সবসময়ই অধিকার আছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার।”
“আমার মনে হয় না, কোনো ক্রিকেটার বা কোনো ব্যক্তিকে ভুল কিছু বলেছি আমি। মাঠে যা হয়েছে, সেসবই বলেছি। এটা নিয়ে কোনো আক্ষেপ করি না।” নিজেকে একজন ভালো ‘রোল মডেল’ মনে করেন কি না, এই প্রশ্নে হারমানপ্রিতের সরাসরি উত্তর, “হ্যাঁ, অবশ্যই।” এটা বলার সময় তার কণ্ঠে সংশয়ের কোনো ছাপ ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ‘টাই’ হয়। ১-১ সমতায় শেষ হয় সিরিজ।
ম্যাচে ভারতের রান তাড়ার ৩৪তম ওভারে নাহিদা আক্তারের বলে আউট হন হারমানপ্রিত। আম্পায়ারের আঙুল উঠতে দেখেই তিনি ফুঁসে ওঠেন যেন। শুরুতে এক হাত দিয়ে থাবা মারেন আরেক হাতে ধরে রাখা ব্যাটে। আম্পায়ারের দিকে তাকান আগুনে দৃষ্টিতে। এরপর ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে এতটাই জোরে মারেন যে, একটি স্টাম্প উড়ে গিয়ে পড়ে অনেকটা দূরে। ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার সময় আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে থাকেন টানা। এরপর ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে দেখান ‘থামস আপ।’
আম্পায়ার তাকে দিয়েছিলেন ক্যাচ আউট। টিভি রিপ্লে থেকে বোঝা যায়নি, আদৌ বল তার ব্যাটে বা গ্লাভসে লেগেছিল কি না। ওই সিরিজে ডিআরএস ছিল না। তবে ব্যাটে বা গ্লাভসে যদি বল স্পর্শ নাও করে, এলবিডব্লিউ একরকম নিশ্চিতভাবেই ছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে দুই দফায় ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও হারমানপ্রিত দুবারই নিজ থেকে টেনে আনেন আম্পায়ারিং প্রসঙ্গ।
“এই ম্যাচ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এমনকি ক্রিকেটের বাইরেও, যে ধরনের আম্পায়ারিং ওখানে হচ্ছিল, আমরা খুবই বিস্মিত হয়েছি। পরে আমরা যখনই বাংলাদেশে আসব, নিশ্চিত করব যেন এই ধরনের আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।”
“তারা (বাংলাদেশ) সত্যিই ভালো ব্যাট করেছে, এটা নিয়ে সংশয় নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করেছে। সিঙ্গেলগুলো নিয়েছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা কিছু রান বিলিয়ে দিয়েছি। তবে ব্যাটিংয়ে আমরা খুব ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে ছিলাম। কিন্তু আগে যেমনটি বললাম, আম্পায়ারিং ছিল ‘প্যাথেটিক’ এবং আম্পায়ারদের কিছু সিদ্ধান্তে আমরা খুবই হতাশ।”
ভারতীয় অধিনায়কের ক্ষোভ শুধু আম্পায়ারিং নিয়েই ছিল না। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চের অতিথি নিয়েও তীর্যক কথা উঠে আসে তার কণ্ঠে। “ভালো ম্যাচ হয়েছে, অনেক কিছু শিখেছি এবং সবশেষে ভারতের হাই কমিশন (হাই কমিশনার) এখানে আছেন এবং আশা করেছিলাম, তাকেও আপনারা এখানে আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে সমস্যা নেই।”
পুরস্কার বিতরণী শেষে যখন বাংলাদেশ দল উল্লাস করছিল ট্রফি ও পতাকা নিয়ে, সেদিকে তাকিয়ে হারমানপ্রিত মন্তব্য করেন, এই ট্রফি বাংলাদেশ জেতেনি, আম্পায়াররা জিতিয়েছে। গ্যালারির দিকে ভারতীয় অধিনায়ক অনেকটা কটাক্ষ করেই যেন হাত নাড়েন, ‘থামস আপ’ দেখান। বাংলাদেশ দলের দিকে তাকিয়ে বলেন, ফটোসেশনে যেন আম্পায়ারদেরও সঙ্গে নেওয়া হয়।
তার এসব কথা ও কাণ্ডে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও আলোচনা হয় বেশ। এমনকি ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মদন লাল এই আচরণকে ‘প্যাথেটিক’ উল্লেখ করে হারমানপ্রিতের বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ভারতীয় বোর্ডের কাছে। হারমানপ্রিতের আচরণে কড়া সমালোচনা করেন ভারতের সাবক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার আঞ্জুম চোপড়াও।


প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর