রানিং ও ব্যাটিংয়ে ফেরার আনন্দ তামিমের

স্পোর্টস ডেস্ক: ক্যামেরা-মাইক্রোফোন হাতে আর উৎসুক নজর নিয়ে সংবাদকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন অনেকক্ষণ থেকে। অনেক দিন পর তামিম ইকবাল ব্যাট করবেন বলে কথা! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আসার পর তিনি অবশ্য সময় নিলেন অনেকটা। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে নামলেন একাডেমি মাঠের নেটে। প্যাড পায়ে ব্যাট হাতে তাকে দেখা গেল দেড় মাস পর!
চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার পথে উল্লেখযোগ্য এক ধাপে পা রাখলেন তামিম। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান গত প্রায় দুই সপ্তাহ স্রেফ শারীরিক কসরতের পর অবশেষে শুরু করলেন ব্যাটিং। গত মাসে ইনজেকশন নেওয়ার পর প্রথমবার রানিংও করলেন তিনি এ দিন। একাডেমি মাঠের নেটে রোববার ১৫ মিনিটের মতো ব্যাটিং করেন তামিম। পুরোপুরি নেট সেশন অবশ্য নয়, স্রেফ হালকা নক করেন তিনি। এরপর মূল মাঠে ফিরে রানিং করেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি কিছু বিশেষায়িত শারীরিক অনুশীলন করতেও দেখা যায় তাকে।
বিসিবির ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম ও সদ্য যোগ দেওয়া পুনর্বাসন ব্যবস্থাপক কাইরান থমসের তত্ত্বাবধানে এই রানিং ও ব্যাটিং সেশন করেন তামিম। পুরো সময়টায় তার দিকে কাছ থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন দুজনই। প্রথম দিন থেকেই তার পুনবার্সন প্রক্রিয়া চলছে বায়েজিদুলের তত্ত্বাবধানে। এমনিতে প্রতিদিন সকালে চলছিল তামিমের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। রোববার ব্যাটিংয়ের কারণে একটু বদল আনা হয় তার সূচিতে। দুপুরে মাঠে আসার পর তার শারীরিক অবস্থার মূল্যায়ন করেন ফিজিও। এরপর ব্যাটিংয়ের সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয় তাকে।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে নেটে যান তামিম। ব্যাটিং করেন ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। কোনো বোলারকে নয়, টিম বয় নাসিরের কিছু থ্রো ডাউন খেলেন তিনি। বেশির ভাগ সময় পেছনের পায়েই খেলতে দেখা যায় তাকে। কিছু শট খেলেন সামনের পায়ে। ব্যাটিংয়ের সময় খুব একটা অস্বস্তি বোঝা যায়নি দূর থেকে দেখে। তবে ব্যাটিংয়ের সময় নেটের ঠিক পেছনেই থাকা ফিজিও ও ট্রেনারের সঙ্গে বার তিনেক কথা বলতে দেখা যায় তাকে। তার বড় ভাই ও জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালও ছিলেন সেখানে।
তামিম বললেন, ব্যাটিংয়ে ফিরতে পারাই আপাতত তার কাছে বড় স্বস্তির। “যদিও শুধু নক করেছি, তার পরও খুব ভালো লাগছে। কতদিন পর ব্যাটিং করলাম! কোনো অস্বস্তি হয়নি। এখন অবশ্য হওয়ারও কথা নয়। যখন ইনটেনসিটি আরও বাড়বে, পুরোপুরি নেট সেশন শুরু করলে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। আপাতত ব্যাটিং করতে পারলাম, এতেই খুব ভালো লাগছে।” পুনবার্সন প্রক্রিয়া শুরুর পর এই দুই সপ্তাহে মাঝেমধ্যে হালকা ব্যথা হওয়া ছাড়া পিঠের সেই তীব্র ব্যথা আপাতত ফিরে আসেনি বলেও জানালেন তামিম।
তার পুনবার্সনের যে সূচি করা হয়েছে, তাতে এখনই প্রতিদিন ব্যাটিং রাখা হয়নি। নিউ জিল্যান্ড সিরিজের আগে যেহেতু এক মাস সময় আছে এখনও, তাই ধীরে এগোনোর পথ বেছে নিয়েছেন ফিজিওরা। পুরোপুরি নেট সেশন শুরু করতে আরও দিন দশেক সময় তার লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সবশেষ গত ৫ জুলাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং করেছিলেন তামিম। পরদিনই আচমকা বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে আবার ফেরেন ক্রিকেটে। এরপর কিছুদিনের ছুটি শেষে গত মাসের দিকে লন্ডনে যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে। স্ক্যান করে তার মেরুদণ্ডের হারের নিচের দিকে ক্ষয় ধরা পড়ে। ব্যথা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া দুটি ডিস্ক ঘিরে পরপর দুই দিন ইনজেকশন দেওয়া হয় তাকে। এই ইনজেকশন সাধারণত স্নায়ুকে নিস্তেজ করে রাখে একটি নির্দিষ্ট সময়। তবে সেই সময়টার নিখুঁত নিশ্চয়তা দিতে পারেন না চিকিৎসকরাও। কারও ক্ষেত্রে ইনজেকশনের কার্যকারিতা ২-৩ মাস থেকে শুরু করে ৪-৫ মাস পর্যন্ত থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনেক দ্রুত, এমনকি এক মাসের মধ্যেও ব্যথা ফিরে আসে। বিশ্বকাপে তাকিয়ে ব্যথা ফিরে না আসার আশা নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তামিম।


প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ