ডিমের দামে উল্লম্ফন

সানশাইন ডেস্ক: আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে প্রতিটি ১৪ টাকায় উঠেছে, যা অস্বাভাবিক ঠেকছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে। ডিমের দামের এই রেকর্ড উল্লম্ফনের পেছনে কারসাজি রয়েছে কি না, তা খোঁজে অভিযানে নামছেন বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ডিম বিক্রেতারা সরবরাহ কমে যাওয়াকে কারণ দেখিয়েছেন। খামারিরা উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ দেখাচ্ছেন গত কিছু দিনের অতিরিক্ত গরমের পর এখনকার অতিবৃষ্টিকে। এই অবস্থায় ডিম সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে রোববার সভা ডাকা হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। বর্ষায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে প্রতি বছর এই সময় ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দাম বৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকার বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়। গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
ডিমের দাম এত বেশি আগে কখনও না দেখার কথা জানিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রান্তিক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।” পরিকল্পনা করে দাম বাড়ানো হচ্ছে কি না, তা বের করতে অভিযানে নামছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে রাতের মধ্যেই প্রয়োজনীয় জায়গায় অভিযান চালানো হতে পারে।”
ডিমের দাম এত বাড়ার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার। তিনি বলেন, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী একটা ডিমের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ১০ টাকা। আমাদের জানা মতে, ডিমের যে দাম বাড়ছে, তা আসলে মধ্যস্বত্বভোগীরাই হাতিয়ে নিচ্ছে।” পরিস্থিতি বুঝতে আগামী রোববার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
এমদাদুল হক বলেন, “আগামী রোববার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ডিম উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকারীসহ সকল পক্ষ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে এই দাম বৃদ্ধির জন্য কারা দায়ী, তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” ঢাকার বিভিন্ন বাজারের খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যাচেছ, গত ৪/৫ দিন ধরে প্রতিদিন প্রতি ডজন ডিমের দাম ৫ টাকা করে বাড়ছে। বুধবার ১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়।
মিরপুর-১ কাঁচাবাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ১০০ ডিম ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এক সপ্তাহ আগেও ১১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এবং ঢাকার তেজগাঁও আড়ত থেকে ডিম সংগ্রহ করি। সেখানে দাম বৃদ্ধি পেলেই আমাদের অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হয়। ১০০ ডিমে আমরা মাত্র ১০ টাকা লাভ করি।”
তেজগাঁও স্টেশন রোডের ডিম ব্যবসায়ী রুপসী ট্রেডার্সের মো. মুসা বলেন, মুলত ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। “দুই সপ্তাহ আগেও টাঙ্গাইল থেকে আমার জন্য প্রতিদিন ৮২ হাজার ডিম আসত। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে আসছে ৭২ হাজারের মতো।” মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়াতে পারে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “থাকতে পারে। তবেগত কয়েক মাসে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লেয়ার মুরগি মারা যাওয়ায় খামারিদের পাশাপাশি তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ তারা মুরগির খামারে দাদন দিয়ে বিনিয়োগ করে।”
ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য তিনটি কারণ দেখান বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন। তিনি বলেন, “এবারের ক্রইসিসের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। গত কয়েক মাসের গরমে লেয়ার মুরগি মারা যাওয়া, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া এবং টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে মাছ সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া।” খামার থেকে প্রতিটি ডিম উৎপাদন খরচ হিসাব করে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ে প্রশ্নে মহসিন বলেন, “এক সময় পোল্ট্রি শিল্পের বিশেষ করে ডিম সরবরাহে মধ্যস্বত্বভোগী ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ। এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ১৫ শতাংশে। এই অংশ নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।”


প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ