বৃষ্টিহীন শ্রাবণে রোদে পুড়ছে জনপদ

স্টাফ রিপোর্টার: প্রখ্যাত লেখক হুমায়ন আহম্মেদের লেখা একটি উপন্যাসের নাম ছিল ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’। ১৯৯৪ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। তার লেখা সেই উপন্যাসে হাওড় অঞ্চলের মানুষগুলোর বিভিন্ন সংকটের কথা। সঙ্গে শ্রাবণের বৃষ্টি, জোৎনা জলের মাখামাখি। তার লেখুনিতে ফুটে উঠেছিল প্রকৃতির রূপ অনুরাগী। কিন্তু মাত্র তিন দশকেই পাল্টে গেছে প্রকৃতি। প্রকৃতিক বিপর্যায়ে এখন শ্রাবণের আকাশে মেঘ বৃষ্টির খেলা চলে না। যেখানে বৃষ্টিতে স্নান করে প্রকৃতি হয়ে উঠার কথা সতেজ সেখানে রোদের তাপে উঠছে তেঁতে। শ্রাবণ মাসটিও এবার পার হচ্ছে অনেকটা বৃষ্টিহীন অবস্থায়।
বৃষ্টি মানেই তো শ্রাবণ। শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভরে উঠে নদ-নদী, পুবালি বাতাসে নেচে উঠে প্রকৃতি। কিন্তু বিশ^ব্যাপি প্রকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। পুড়ছে প্রকৃতি। ভরা বর্ষা মৌসুমেও এবার কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়নি। এখন কদম ফুলে চেনা যায় বর্ষাকাল। তবু সেই ফুলও ফোটে হয় তো অনেক বেদনা নিয়ে। বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে থেকে থেকে রোদে পুড়ে অকালেই ঝরে পড়ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত কোথাও কোথাও ৭০ শতাংশের কম বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। তাই অস্বাভাবিক বৃষ্টি ও তাপমাত্রার বর্ষাকাল পার করছে বাংলাদেশ।
আবহাওয়াবিদ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার এমন আচরণ অতীতেও দেখা গেছে। সাগর থেকে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্প স্থলভাগে আসতে পারছে না। তাই মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয়তায় এ বৃষ্টিহীনতা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ আবহাওয়ার বিভিন্ন বিষয় এর জন্য দায়ী।
বৃষ্টিহীন তপ্ত বাস্তবতা এ মুহূর্তে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই খরা যাচ্ছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার শীর্ষ জলবায়ুবিদ গ্যাভিন স্মিট এক বিবৃতিতে জানান, চলমান জুলাই মাস হতে পারে শত শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এছাড়া চলতি বছরের তুলনায় ২০২৪ সাল আরও বেশি উষ্ণ বছর হতে পারে।
রাজশাহী ও উত্তরাঞ্চলের আমন ধান রোপন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। যারা আমন ধান রোপন করেছেন পানি সেচ দিতে না পেরে সেসব আমনের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে রোপনকৃত ধান। আবার যারা আমন এখনো রোপন করেনি তাদের আমনের চারা বীজ তলাতেই নষ্ট হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা বর্ষাকাল ধরা হয়। সারা বছর যে বৃষ্টিপাত হয়, এর ৭১ শতাংশই হয় এ চার মাসে।
তিনি আরো জানান, ২২ জুলাই পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৯ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ২২ তারিখ পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃষ্টিপাত অনুযায়ী স্বাভাবিকের চেয়ে ঢাকায় ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১৬ শতাংশ, সিলেটে ৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রংপুরে ৩২ শতাংশ, খুলনায় ৬০ শতাংশ, বরিশালে ৬৯ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এখন সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মোটামুটি ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকছে। কখনো কখনো তা ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে বলেও জানান নাজমুল হক।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ