সর্বশেষ সংবাদ :

তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ‘নায়রা’

রায়হান আলম, নওগাঁ: নওগাঁয় জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের পোশাক বেচাকেনা। জেলা শহরের বিপণি বিতানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ঈদের আমেজ। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নায়রা, গারারা, সারারার মতো বাহারি নামে দেওয়া হয়েছে থ্রি-পিসের। তরুণীরাও কিনছেন এসব থ্রি-পিস। তবে সবেচেয়ে বেশি আকর্ষণ ‘নায়রা’।
শহরে গীতাঞ্জলি শপিং প্লাজা, জহির প্লাজা, শুভ প্লাজা, দেওয়ান বাজার, বিশাল ক্লোথ স্টোরসহ বিভিন্নসহ বিপণি বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ার মত। ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে বিক্রেতারাও বিভিন্ন পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। তবে নারী ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল বেশি। এবার পোশাকের দামটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
কয়েকজন বিক্রেতা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা কম। প্রথম ১০ রোজা পর্যন্ত ঈদের পোশাকের বেচাকেনা একেবারেই ঢিলেঢালা থাকলেও এরপর থেকে বাজারে ক্রেতা সমাগম আর বেচাকেনা আস্তে আস্তে বাড়ছে। তবে দেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বিদেশী পোশাকের চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের। তবে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ভারতীয় ‘নায়রা’ ড্রেসে।
এছাড়াও শারারা, গারারা, রেড়ি, গাউন, কারিসমা, জহুরা, লুলুসাসহ বিভিন্ন থ্রি-পিসের পাশাপাশি শাড়ি কিনছেন নারীরা। আর বরাবরের মতো ছেলেদের পছন্দের তালিকায় জিন্স প্যান্ট, প্রিন্টের শার্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। তবে প্রত্যেকটি জিনিসের বেশি দামে কেনার কারনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
গীতাঞ্জলি মার্কেটের শীলামুনি দোকানের বিক্রয়কর্মী রামু চন্দ্র রজক বলেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হচ্ছে নায়রা ড্রেস। ছোট থেকে বড় সবারই একই চাহিদা নায়রা ড্রেস। দোকানে এসে আগেই জিজ্ঞাসা করছে নায়রা ড্রেস আছে কিনা? ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সেইভাবে দিতে পারছি না। অনেকেই এসে ঘুরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই ভারতীয় ড্রেসটি। অনেক তরুনী এই ড্রেস কেনার পর প্রশংসা করছেন। অনেক ভালো মানের কাপড় ও সাধ্যের মধ্যে দাম আছে।
জেলার রানীনগর উপজেলার আবাদপুর এলাকা থেকে মায়ের সাথে পোশাক কিনতে এসেছেন তানজিলা ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে নায়রা ড্রেসটা বেশি চলছে। প্রথমে বাজারে এসে এই ড্রেসটা দেখি। এছাড়াও আরও কয়েকটি ড্রেস দেখার পরে অবশ্য নায়রা ড্রেসটি নিয়েছে। যদিও দাম বেশি।
সদর উপজেলার কীর্ত্তপুর এলাকা থেকে নবশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সানজিদা তার বাবা-মায়ের সাথে পোশাক কিনতে এসেছে। তার বাবা আকবর হোসেন বলেন, এবছর আমার মেয়ের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ‘নায়রা’।
মেয়ের পোশাকের জন্য চার হাজার টাকা বাজেট করেছি। এরমধ্যে একটা ড্রেস কিনবো। কিন্তু দাম বেশি হওযায় এখনও কিনতে পারি নাই। যেহেতু মেয়ের পছন্দ আরও কয়েকটা দোকান ঘুরে দেখি। এই বাজেটে না হলে বেশি দামেই মেয়েকে কিনে দিতে হবে।
পাশ্ববর্তী সান্তাহার থেকে মার্কেটে এসেছেন লাবনি আক্তার। তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বেশি। এখনও পর্যন্ত আমার মেয়ে আর ভাসতির জন্য জামা-কাপড় কিনতে পেরেছি। আমার জন্য এখনও কিনতে পারি নাই।
মায়ের সাথে পাশ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থেকে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছে কলেজ পড়ুয়া সৌমিক। তিনি বলেন, বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখলাম। পরে শীলামুনিতে এসে পাঞ্জাবি পছন্দ হয়। এখানে অনেক আনেক ভালো মানের পাঞ্জাবি আছে। একটি ২৯শ টাকা আরেকটি ৪ হাজার টাকা দিয়ে পাঞ্জাবি কিনলাম।
শীলামুনি দোকানের স্বত্বাধিকারী নেপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, প্রথম ১০ রোজা পর্যন্ত ঈদের পোশাকের বেচাকেনা একেবারেই ঢিলেঢালা ছিল। এরপর থেকে কিছুটা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে যত দিন যাবে বেচাকেনা আরও ভালো হবে আশা করা হচ্ছে। মার্কেটে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের উপস্থিতি কম। তবে এবার আমাদের যে লক্ষ্যে সেই অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে না।
আসমান বিগ-বাজারের স্বত্বাধিকারী ওহিদুর রহমান বলেন, এবার সবচেয়ে ‘নায়রা’ ড্রেসটার চাহিদা বেশি। এছাড়াও রেড়ি, গাউন, কারিসমা, জহুরা, লুলুসাসহ অন্যান্য পোশাক রয়েছে। সেগুলোরও কম-বেশি চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব ভালো না আবার খারাপও না। সব জিনিসের দাম বেশি। এই জন্য মানুষ কেনাকাটা কম করছে। এই কারনে বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে না। এখনো ঈদের কিছুদিন বাকি আছে দেখা যাক কি হয়। আশা করছি সামনের দিনে হয়তো ভালো বেচাকেনা হবে।
আনিলা ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী সাাব্বির হাসান বলেন, এবার আমার দোকানে বিভিন্ন রকম দেশি-বিদেশী পাঞ্জাবি, শার্ট আছে। সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫-৬ হাজার টাকার দামের পাঞ্জাবি রয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার থেকে শুরু করে ৩৫শ টাকা দামের শার্ট রয়েছে।
তবে আমরা যে আশা নিয়ে পোশাক কিনে বসে আছি আসলে সেইভাবে বেচাকেনা নেই। সব জিনিসের দাম। ক্রেতার সংখ্যাও কম। যারা দুই-তিনটা পোশাক কিনতো তারা একটির বেশি কিনছে না।
পোশাকের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে বলেন, আমাদেরকে পাইকারি বেশি দামে জিনিস কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের করার কিছু নেই।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ