বিদ্যুতের বিপর্যয়ে নাকাল জনজীবন, বৈষম্যে গ্রাম

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামে অব্যাহত দাবদাহের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনে রাতে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। চলনবিল অধ্যুষিত এ উপজেলায় বর্তমানে পুরো দমে আউশ ধানের চারা রোপণ চলছে। কিন্তু অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ পাম্পে ঠিকমতো পানিই তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে চাষাবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পৌর এলাকায় কিছুটা কম হলেও গ্রামে সারা দিনে কমপক্ষে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে।
রয়না গ্রামের কলেজ শিক্ষক আকরামুল হক বলেন, আগেও লোডশেডিং হতো। তবে কিছুদিন যাবৎ এটা অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। তীব্র তাপদাহের সঙ্গে দিন রাত ব্যাপক লোডশেডিংয়ে গরমের কষ্টতো হচ্ছেই, পাশাপাশি প্রতিটা রাত প্রায় নির্ঘুম কাটছে। এতে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অব্যাহত দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় গ্রাহক পর্যায়ে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ২২ মেগাওয়াটের বিপরীতে মিলছে ১৪ মেগাওয়াট। আর অফ পিক আওয়ারে ১৯ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১২ মেগাওয়াট। এ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের ঘাটতি আছে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। ঘাটতির কারণে শহর এলাকার চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
বাজিতপুর গ্রামের গভীর নলকুপ ম্যানেজার রিপন জানান, গ্রামে দিন রাত মিলে ১৩-১৪ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। দেড়-দুই ঘন্টা পর বিদ্যুৎ এসে ২৫-৩০ মিনিট পরই চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ আসার পর পাম্প জুড়তে না জুড়তেই আবার নাই। এভাবে জমিতে সেচ দেয়াই যাচ্ছে না, অথচ মানুষজন ধান লাগানোর জন্য সেচ নিতে ঘুরে ঘুরে আসছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে পানি দিতেই পারছি না।
মামুদপুর গ্রামের অটোরিক্সা চালক আবু রায়হান বলেন, সচরাচর রাতে রিক্সা চার্জ দেই, কিন্তু রাতেই যেন লোডশেডিং বেশি। সারাদিন অটোরিক্সা চালিয়ে যা পাই, তাতেই আমার সংসার চলে। কিন্তু কিছুদিন ধরে রাতদিন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাতে ঠিকমত চার্জ দিতেই পারছি না। এমন হলে সংসার চলবে কি করে।
রয়না ভরট গ্রামের স্কুল ছাত্রী হুসনেয়ারা খাতুন ও সাহারা খাতুন বলেন, সারাদিনতো লোডশেডিং হচ্ছেই, রাতেও দেড়-দুই ঘন্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে। আবার ২০-২৫ মিনিট পরই চলে যায়। এতে পড়ালেখাই করতে পারছি না। অথচ বুধবার থেকে আমাদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের ফলে তীব্র গরমে সারা রাতে ২-৩ ঘন্টাও ঘুম হচ্ছে না। এতে শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
জোনাইল বাজারের ওয়েল্ডিং কারখানার মালিক শেখ ফরিদ বলেন, আমার কারখানায় ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। রাতদিন কাজ করেও শেষ করতে পারি না, অথচ ব্যাপক শোডশেডিংয়ের কারণে কাজই করতে পারছি না। এতে গ্রাহকদেরকে নির্ধারিত সময়ে জিনিসপত্র দিতে পারছি না। ফলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। আবার শ্রমিকদেরকেও বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে।
বাগডোব এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিতরণেও বৈষম্য করা হচ্ছে। পৌরসভা এলাকায় কম দিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেক বেশি লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৮-১০ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোমীনুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেও ২৩-২৪ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিলো, তবে এখন তার পরিমাণ ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা যতটুকু পাচ্ছি, ততটুকুই দিচ্ছি। তবে পৌর এলাকায় থানা, হাসপাতাল ও সরকারী অফিস থাকায় বাধ্য হয়েই লোডশেডিং একটু কম দেয়া হয় বলে তিনি জানান।


প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ | সময়: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর