পবায় ভাতার টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের আওতায় উপকার ভোগীদের ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। উপকার ভোগীদের মুঠোফোনের পিন নম্বর জেনে নিয়ে তুলে নিচ্ছে টাকা। এ নিয়ে মঙ্গলবার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ভাতাভোগী রয়েছেন ১৯ হাজার ২৫৩ জন। বয়স্ক, বিধবা নারী, হিজড়া জনগোষ্ঠি, অনোগ্রসর জনগোষ্ঠি ও শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রতিবন্ধীরা পান ভাতার টাকা। এরমধ্যে বয়স্ক ভাতা এসব ৯ হাজার ৪১৩ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ৫ হাজার ৩২২ জন, বিধবা ভাতা ৪ হাজার ২১০ জন, ৫৯ জন হিজড়া, ৫৩ জন অনোগ্রসর জনগোষ্ঠি, শিক্ষা উপবৃত্তি ১৯৬জন। আগে ভাতাভোগীকে ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হলেও অনিয়ম ও চাপ সামলাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ শুরু হয়।
মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে উপকারভোগীরা যেন ঘরে বসে টাকা পান সে লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসে (এমআইএস) তথ্য সংযুক্তি হয়। নগদ সেবা ও বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে উপকার ভোগীদের ভাতা।
মোবাইল সেবা কোম্পানির মাধ্যমে পরে উপকার ভোগীদের সিম নম্বর এন্ট্রি করা হয় এমআইএসএ। সেই নম্বরে একটি পিন নম্বর দেওয়া হয় প্রত্যেককে। বয়স্ক ও বিধবারা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৭৫০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাস পরপর বরাদ্দের টাকা উপকার ভোগীদের মুঠোফোনে যাচ্ছে।
এতে তখন থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রতারক চক্র। ভাতাভোগীদের মুঠোফোনে ফোন করে নানা তথ্য জানার সঙ্গে পিন নম্বর জেনে নিয়ে তুলে নিচ্ছে টাকা।
প্রতারকের ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় আপনি অমুক ভাতাভোগি। আপনার মোবাইলে টাকা ঢুকবে। পরে আবারো ওই নাম্বার থেকে বলা হয় টাকা ঢুকেনি। এপার বলা হয় কৈ নাতো। তখন বলে আচ্ছা দেখছি। একটু পরে আবারো ফোন করে জানানো হয় আপনার বিকাশ নাম্বারটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা বিকাশ অফিসে আবার ফোন করে আপনার বিকাশ নাম্বারটি যেন আবার চালু করে দেয় সেজন্য বলে দিচ্ছি বলে ফোন রেখে দেয় প্রতারক চক্রের প্রথমজন। এর কিছুক্ষণ পর মেসেজ এবং কল করে। মেসেজে এবারে যে নম্বার দেয়া থাকে সেটা চাই। প্রতারকের কথামত তথ্যগুলো দেয়ার পরই উধাও হয়ে যায় টাকা।
এবারে ঈদের আগে অগ্রিম তিন মাসের টাকা দেওয়া হয়। পবা উপজেলায় বিকাশ বা নগদে উপজেলার ১০৪১ জনের নতুন প্রতিবন্ধীভাতা ৭৬৫০ টাকা। এছাড়াও ৪২৮১ জনকে দেওয়া হয় ২৫৫০ টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও বয়স্ক ভাতা ৯ হাজার ৪১৩ জনের প্রত্যেককে ১৫০০ টাকা, বিধবা ভাতা ৪ হাজার ২১০ জনের প্রত্যেককে ১৫০০ টাকা। এমনভাবে ৫৯ জন হিজড়া, ৫৩ জন অনোগ্রসর জনগোষ্ঠি, শিক্ষা উপবৃত্তি ১৯৬জনের টাকাও বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে এসেছে। যার অধিকাংশ নম্বর থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এব্যাপারে পবা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল জানান, টাকা না পেয়ে অনেকে আমাদের কাছে আসছেন। এতে আমাদের কিছু করার নেই। বিষয়টি জানার পরেই তিনি জনসচেতনতার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় এবং ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সকল মসজিদে চিঠি দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৩ | সময়: ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ