বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। বহুকাল থেকে এ অঞ্চলে চলে আসছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অনেকেই বাঘাকে মাদকের রাজধানী বলে অখ্যায়িত করে থাকেন। এখানে ১০-১২ টি গ্রাম মিলে প্রায় তিন শতাধিক মাদক চোরাকারবারী রয়েছে। তবে থানায় তালিকা রয়েছে ১৮০ জনের। আগত ঈদকে সামনে রেখে পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এর মৌজুদ ও প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। যা অকপটে স্বীকার করেছে থানা পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন, এখানে প্রতিমাসে যে পরিমান মামলা রেকর্ড হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগই মাদক ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে , ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর বাঘা সীমান্তে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক চোরাচালান। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রতিদিন অনায়াসে চলে আসছে মরণ নেশা হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হিরোইন ও গাঁজা সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। যা পারা-পারের জন্য রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান সিন্ডিকেট। এদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক। এর মধ্যে থানায় তালিকা ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে চিহৃত- মীরগঞ্জের শামিম হোসেন, বুলবুল মোল্লা, রুবেল মোল্লা, ভানুকর গ্রামের শিমুল ও মনির, আলাইপুরের মনিরুজ্জামান, আব্দুল বারী, গাজি, বানেজ, গোলাম মোস্তফা, চপল, সিদ্দিক হোসেন ও ঝুন্টু ,গোকুলপুরের মেরাজ, পাকুড়িয়ার শহিদুল ও শরিফুল, আড়ানীর সেলিম, মহদীপুরের রিয়াল এবং বাঘার রবি ভান্ডারী ও তার ছেলে রাব্বী হোসেন-সহ ১৮০ জন । এরমধ্যে লোকজনের কাছে ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠেছে রবি ভান্ডরি এবং তার ছেলে রাব্বি হাসান।
বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন জানান, ঈদকে সামনে রেখে এখন সীমান্ত এলাকায় গেলে দেখা মিলবে দামি-দামি মোটার সাইকেল ও প্রাইভেট কার-সহ বহিরাগত যুবকদের উপস্থিতি। এ অঞ্চলে যারা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় লোকজন তাদের একেক জনকে একেক নামে ডাকে। এদের মধ্যে রবি ভান্ডারী নামে একজন পিতাকে ডাকা হচ্ছে গাঁজার ডিলার এবং ছেলেকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সম্রাট। এই দু’জনের নামে থানায় রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তারা কখনো-কখনো জেল হাজত খাটলেও এখন বাড়িতে অবস্থান করছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে মাদক কারবার।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবি ভান্ডরির কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, অত্র অঞ্চলে যারা মাদকের ব্যবসা করে তাদের মধ্যে এখন পিতা-পুত্রের ব্যবসা বেশ জোরে-সোরে চলছে। এদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলে বোঝা যাবে তাদের ব্যবসায়ীক কৌশল এবং চোখে পড়বে প্রশাসনের চোক ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা। লোকজন আরো জানান, এরা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। মাঝে মধ্যে এদের বাড়িতে বহিরাগত কিছু মানুষকে দেখা যাই। অত:পর পরিচয় জানতে চাইলে আত্নীয় বলে চালিয়ে দেন।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর তদন্ত) আব্দুল করিম জানান, রবি ভান্ডরি এবং তার ছেলে রাব্বি হাসানের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এদের খুটির জোর এতো বেশি যে, মাদক সহ আটক করে জেল-হাজতে পাঠালেও ক’দিন না যেতে ফের হাজত থেকে বেরিয়ে এসে পূর্বের ন্যায় মাদক ব্যবসা শুরু করে । এ ছাড়াও তারা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে ব্যবসা করে। ওসি আরো বলেন, এ থানায় প্রতিমাসে যে পরিমান মামলা হয় ,তার তিন ভাগের দুই ভাগই মাদক মামলা। তাঁর মতে, এটি প্রতিরোধ করতে হলে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে হবে। একই সাথে বাঘা সীমান্তে অবস্থিত দু’টি বর্ডার গার্ড(বি.জি.বি) ক্যাম্পের সদস্যদের আরো সক্রীয় হতে হবে।