ফেক নিউজ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে’

সানশাইন ডেস্ক: ফেক নিউজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা কমিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ফেক নিউজের বিস্তার সাধারণ খবরের থেকে অনেক দ্রুতগতিতে হয়। আবার অনেক সময় সেই নিউজের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না। ফেক নিউজ বাংলাদেশের মানবাধিকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি সংস্থা এলকপ আয়োজিত “ফেক নিউজ: মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এ কথা তুলে ধরা হয়।
সেমিনারের প্রথম সেশনে ‘ফেক নিউজ: সার্ক ও ব্রিকসভুক্ত (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক জোট) দেশসমূহে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সেলিম সামাদ। তিনি তার প্রবন্ধে ফেক নিউজ নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়া ও ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাবকে তুলে ধরেন।
এরপর ‘ফেক নিউজ: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলকসের গবেষক আরেফিন মিজান। তিনি তার প্রবন্ধে আলোচনা করেন কীভাবে ফেক নিউজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা কমিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ফেক নিউজের কারণে বাকস্বাধীনতার পথ সংকুচিত হয়, সমাজে আতঙ্ক এবং আস্থাহীনতা বিরাজ করে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি হয় ফেক নিউজের কারণে।
তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে প্রচুর ফেক নিউজ প্রচার করা হয়। সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এসব ফেক নিউজ বন্ধ করা সম্ভব না। ‘একজন আর দশ জনকে শিখাই’ স্লোগানের মাধ্যমে ফেক নিউজ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে তার প্রবন্ধ উপস্থাপনা শেষ করেন। ওই সেশনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, ভারত থেকে ড. অর্ঘ্য সেনগুপ্ত ও পুলকেশ ঘোষ।
ড. বারাকাত বলেন, ফেক নিউজের ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন। কারণ, এটার পরিসর অনেক বড়। ফেক নিউজের একটি চাহিদা তো অবশ্যই আছে, যার কারণে এগুলো তৈরি করা হয়। সাধারণ খবর থেকে অনেক দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে ফেক নিউজ। তিনি বলেন, ফেক নিউজকে মোকাবিলা করতে যুগোপযোগী আইনি কাঠামো, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অঙ্গীকার ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ড. অর্ঘ্য বলেন, যেহেতু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে, সেহেতু প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সেমিনারের দ্বিতীয় সেশনে ‘ফেক নিউজ সার্ক ও ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহে মানবাধিকারের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলকপের গবেষক অরুপ রতন সাহা। তিনি তার প্রবন্ধে মানবাধিকারের ওপর ফেক নিউজের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি এসব দেশে যেসব আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন।
এরপর এলকপের গবেষক মো. জহির উদ্দিন সোহাগ ‘ফেক নিউজ: বাংলাদেশের মানবাধিকারের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন কীভাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থান ও পপুলিজম কারণে ফেক নিউজের দ্রুত বিস্তার হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে সাধারণ জনগণ উত্তেজিত হয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করতে পারে। প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে কীভাবে ফেক নিউজ বাংলাদেশের মানবাধিকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ওই সেশনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, নেপাল থেকে অধ্যাপক ড. যুবরাজ সাংরুনা, ভারত থেকে জয়ন্ত রায় চৌধুরী, ড. লোপামুদ্রা মৈত্রী বাজপাই এবং রাশিয়া থেকে ‘স্পুটনিক’ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ভাসিলি পুশকড। নেপালের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ড. যুবরাজ বলেন, ফেক নিউজ বন্ধ করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সি ইসলাম খান পাপ্পা, নেপাল দূতাবাসের ললিতা সিলাল, ফিলিস্তিন দূতাবাসের নূর আলোদি, রাশিয়ান দূতাবাসের উপদেষ্টা অ্যানটন চেরনভ ও চীনা দূতাবাসের মিস ফি ইয়ু, আদিবাসী অধিকার বিষয়ক সংস্থার সভাপতি সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. বায়েজিদ হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ | সময়: ৭:১২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ