সবুজ রাজশাহীর সৌন্দর্য নষ্ট করছে রাজনৈতিক পোস্টার-ব্যানার

স্টাফ রিপোর্টার;

রাজশাহী শহর নিয়ে গর্বের শেষ নেই নগরবাসীর । হবে নাই বা কেন ? শুধু বাংলাদেশ নয় , পৃথিবীর বুকেই রাজশাহী এখন পরিচ্ছন্ন নগরীর এক রোল মডেল । আর এটা কোন অমুলক দাবী না । বরং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত ।

 

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশে গত এক দশকে অনেক উন্নতি হয়েছে । যার বেশীরভাগ অবকাঠামোগত । কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিবেশগত উন্নয়নের দিক থেকে রাজশাহীকে টেক্কা দিতে পারেনি । বরং সবুজের নগর হিসেবে রাজশাহীকে একটু একটু করে গড়ে সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নগর জুড়ে বৃক্ষরোপণ করে তিনি নগরবাসীকে উপহার দিয়েছেন নির্মল অক্সিজেন বুক ভরে নেয়ার সুযোগ ।ইতোমধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী হিসেবে স্বীকৃত রাজশাহী।

 

অবাক হলেও সত্য , রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বেশীরভাগ মহানগর যেখানে দূষণের কারণে বাসের প্রায় অযোগ্য বলা হচ্ছে , সেখানে রাজশাহী মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে । বছর কয়েক আগেই যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী শহর। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। রাজশাহী এখন নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা আর গর্বের জায়গা । নিজেদের শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে তারাও নানা প্রশাসনিক উদ্যোগের সাথে অংশ নেয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নগরবাসী কিছুটা ক্ষুব্ধ । রাজনৈতিক প্রচারণায় শহরের দেয়াল , রাস্তাঘাটের বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা গাছপালা কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না প্রচারণী ফেস্টুন আর ব্যানার থেকে । সাথে পোস্টারের যথেচ্ছ ব্যবহার তো আছেই ।

 

আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’ । যার তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে । আবারও দেখা দিয়েছে পোস্টার-ব্যানার উপদ্রব । রাজশাহীর নাগরিকদের মধ্যে এই নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া । বেশীরভাগ মানুষ কোন দলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধী না । কিন্তু তারা প্রচারণার কাজে পোস্টার-ব্যানারে শহর ছেয়ে দেয়ার বিরোধিতা করছেন । অনেকেই বলছেন , এই ডিজিটাল যুগে প্রচারণার জন্য ব্যানার আর পোস্টার ব্যবহারে শহর নোংরা করার কোন প্রয়োজন নেই । বড়জোর লিফলেট , হ্যান্ডবিল ব্যবহারে প্রচারণা সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ । এমনকি , প্রচারণার কাছে দিনভর মাইকিং করে শব্দদূষণ করাও অপরাধ । তেমন কিছু যাতে না হয় , নগরবাসী সেই দিকে কর্তৃপক্ষের সজাগ নজরদারি চেয়েছেন । আর তাছাড়া , রাজশাহীতে সমাবেশ হবে । তার দিনক্ষণ জানায় বাকী নেই কারো । প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাথে অন লাইন প্রচারণার কল্যাণে এই খবর এখন সারাদেশের মানুষ জানে । তাই পোস্টার-ব্যানারে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করার পায়তারার বিপক্ষেই মত দিয়েছেন রাজশাহীবাসী ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তিতে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের আয়োজনে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া কালচারাল মিট’, রাজশাহী-২০২২। সেই আয়োজনের সময় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশনায় রাস্তা, ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা, নির্মাণ সামগ্রী, পোস্টার ব্যানার অপসারণ ইত্যাদি কাজ করা হয় । উদ্দেশ্য ছিল , ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া কালচারাল মিট’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশী আগন্তুক অতিথিদের কাছে রাজশাহীকে উপস্থাপন করা ।

 

কিন্তু রাজশাহীবাসীর প্রশ্ন , শুধু বিশেষ উপলক্ষ্যে আর বিদেশী অতিথিদের জন্য বিশেষ সময়ে কেন পোস্টার-ব্যানার মুক্ত পরিচ্ছন্ন শহর দেখাতে হবে । এটা তো নগরবাসীর অধিকার । তারা এই নগরের স্থায়ী বাসিন্দা । তাদের জন্যেও সারা বছর এমন ব্যবস্থা কার্যকর হোক । নগরবাসী একটি দিনের জন্যেও নিজেদের নগরীকে জঞ্জালে ঢাকা দেখতে চায় না । তাদের আকুতি , এইদিকে একটু নজর দেবেন কি মেয়র মহোদয় ?

 

সানশাইন/তারেক


প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ | সময়: ৫:৩২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine